বিমানের সাবেক এমডিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বিমানে ২৬ ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলায় সাবেক আরও দুই কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা গায়েব করে তারা এই ক্যাডেট পাইলটদের নিয়োগ দিয়েছেন।

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেন। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপক সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল হাই মজুমদার।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুদকের অনুসন্ধানে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলাটি করা হয়েছে।

এ ছাড়া এজাহারে ক্যাডেট পাইলট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন শেখ শিমন-আল-হাশেম, এরিক রেজা খন্দকার, শামির উদ্দিন আহমেদ, সারা শামসুল, অনিন্দা রেজা, আনোয়ার পারভেজ আকাশ, মো. মিরাজুল মুস্তাকিম পিয়াস, সালমান মোহাম্মদ আহসান, মো. মেহেদী হাসান, ইশতিয়াক আহমেদ, আদিব হাসিন, মো. শহীদ উল্লাহ, ইমতিয়াজ রেজা, হাসান আল জুবায়ের রনি, মাশরুফা করিম, মো. মেহেদী হাসান, ফারিহা তাবাসসুম, কাজী মাহাতাবুর রহমান, মো. শাহরিয়ার ইসলাম, তাসিন তাসনিম, এস এম রওনক ইসলাম, মো. মুশফিকুর রহমান, আতিফ আবরার খায়ের, মো. আবদুল মান্নান, আতিফ আরমান খায়ের ও শাহ তাজিন মাহমুদ।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিমানে পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কতজন পাইলট নিয়োগ দেওয়া হবে তা উল্লেখ ছিল না। তবে বিজ্ঞপ্তি দেখে ১০৯ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৮০ জনের নামে চিঠি পাঠানো হয়। যারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন তাদের এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণে বিমান সচিবের দপ্তর থেকে ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি বিমানবাহিনীকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনী পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় অংশ নেন ৫৬ জন। ৯ মার্চ বিমানবাহিনী থেকে ৫৬টি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অফিসে পাঠানো হয়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুদকের অনুসন্ধানকালে বিমানবাহিনী থেকে পাঠানো ৫৬টি এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষার খাতাসহ কাগজপত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইনসে পাওয়া যায়নি। বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের জন্য ইনিশিয়াল স্ক্রিনিং, লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষার জন্য পৃথক কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও কমিটি করা হয়নি। বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদ নিজ স্বাক্ষরে এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষার একটি নম্বরপত্র তৈরি করেন। ব্যবস্থাপক সুদীপ কুমার চক্রবর্তী তার একক স্বাক্ষরে ২৬ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল শিট তৈরি করেন। সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল হাই মজুমদার তার স্বাক্ষরে পর্যায়ক্রমে ২৬ জন ক্যাডেট পাইলটের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করেন।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর ভাতিজাসহ ৩০ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে আরেক দুর্নীতির অভিযোগে বিমানের সাবেক এমডি ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিমানের সাবেক পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশনস) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল, বিমানের ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী এবং সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) অধ্যক্ষ পার্থ কুমার প-িত। ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলাটি এখন বিচারাধীন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.