বিমানের অতিরিক্ত ভাড়ার কবল থেকে এবারও মুক্তি মেলেনি হজ প্যাকেজে। স্বাভাবিক সময়ের থেকে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় তিন গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত খরচের কারণে কোটা পূরণ হচ্ছে না। তারা বলছেন, দ্বিগুণ ভাড়া নির্ধারণ করেও ক্ষতি পুষিয়ে লাভ করা সম্ভব হজ মৌসুমে। বিমানের যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
২০২৩ সালে হজের অতিরিক্ত খরচের কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক ধ্বনি দিতে পারেননি মহান রবের দরবারে। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটাসহ হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব আকাশপথের যাওয়া-আসার ভাড়া ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা হলেও এবার বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় তিন গুণ।
প্রতিবছর বিমান বাংলাদেশ, সৌদি এয়ারলাইনস ও ফ্লাইনাস হজযাত্রী বহন করে। চারবার সৌদি যাওয়া-আসার মধ্যে দুবার ফাঁকা ফ্লাইটের যুক্তি দেখিয়ে এমন অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করে আসছে এয়ারলাইনসগুলো। অথচ ফাঁকা ফ্লাইটে ফুয়েল খরচ ৭০ শতাংশ কম হয়। নেই খাবারসহ আনুষঙ্গিক খরচ।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হজের মৌসুমে দ্বিগুণ ভাড়া ধরেও প্রায় ৩৫ হাজার টাকা বাড়তি নিচ্ছে এয়ারলাইনসগুলো।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন. ‘ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকার স্বাভাবিক যে ভাড়া, সেটার দ্বিগুণ করলেও এত টাকা হওয়ার কথা নয়। এটা কিছুটা কমানো গেলে যাত্রীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে হজযাত্রা করতে পারতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্লাইটগুলো ফেরার পথে দুবাই হয়ে ফিরলে যাত্রী নিয়ে ফিরতে পারবে। এ দিকটাও বিবেচনায় রাখা যায়।’
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিমানের ভাড়া কমানোর দাবি করা হলেও মানছে না কর্তৃপক্ষ। একটি কমিটির মাধ্যমে যৌক্তিক ভাড়া নির্ধারণের দাবি তাদের।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘তারা ফ্লাইট পরিচালনার যে ব্যয় দেখিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করছেন, হজ ফ্লাইটে এ ধরনের কোনো কস্ট নেই। খালি ফ্লাইটে ফুয়েল কস্টও ৭০ শতাংশ কম হয়। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়তি খরচ দেখিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করে উপস্থাপন করছে। ফলে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলো স্পষ্ট নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হজ ফ্লাইটের ভাড়া নির্ধারণের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমানের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠন করা জরুরি। তারা বিশ্লেষণ করে দেখবে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হলো, সেটি যৌক্তিক কি না! এখন বিমান নিজেই অপারেশনাল কস্ট বেশি দেখিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করছে। ফলে কর্তৃপক্ষের এটা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না।’
সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০২৪ সালের হজের জন্য দুটি প্যাকেজের মধ্যে সাধারণ প্যাকেজে খরচ পড়বে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। আর বিশেষ প্যাকেজে খরচ পড়বে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা।