জাপানের টোকিওতে হানেদা বিমানবন্দরের রানওয়েতে দুটি বিমানের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে এবং শতাধিক যাত্রী রক্ষা পেয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান অবতরণের সময় রানওয়েতে পার্ক করে রাখা আরেকটি বিমানের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে দু’টি বিমানেই আগুন ধরে যায়।
আগুন ধরা অবস্থাতেই জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটি রানওয়েতে অবতরণ করে। মুহূর্তেই পুরো রানওয়ে কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়।
জাপান এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ-৩৫০ উড়োজাহাজে ওই সময় ৩৭৯ জন আরোহী ছিল, যাদের মধ্যে আটটি ছিল শিশু। তবে তাদের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।
জাপানের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা এনএইচকে-এর ওয়েবসাইটে পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পার্ক করা কোস্টগার্ডের বিমানে থাকা ছয় ক্রু সদস্যের মধ্যে পাঁচজন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এবং সেটির পাইলট আহত হয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফ্লাইট ৫১৬ বিমানটি ছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি বিমান।
গত ১ জানুয়ারি দেশটিতে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে কোস্টগার্ডের ওই বিমানে করে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল।
বিমানটির হানেদা থেকে নিগাতা শহরের দিকে যাওয়ার কথা ছিল।
জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, অন্য ফ্লাইটটিতে ১৪ জন সামান্য আহত হয়েছে।
আগুন আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্নঅনলাইনে পোস্ট করা ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রানওয়েতে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।
এনএইচকে-এর প্রকাশিত ফুটেজে বিমানের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। বিমানটির ধ্বংসাবশেষ থেকেও আগুনের শিখা জ্বলে ওঠে।
স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, দমকল বাহিনীর বেশ কয়েকটি ইউনিট কয়েক ঘণ্টার লাগাতার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এতে ১৪ যাত্রী এবং ক্রু সামান্য আঘাত পেয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের সাথে সাথে চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে।
আগুনের কারণে বিশাল এই বিমানটি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
উত্তর জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের সাপোরো থেকে জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে যাত্রা শুরু করে।
ফ্লাইটরেডার ওয়েবসাইট অনুসারে, বিমানটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার কয়েক মিনিট আগে হানেদা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমান দু’টির মধ্যে সংঘর্ষের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। কোস্টগার্ড বলছে, কখন এবং কিভাবে দু’টি বিমানের সংঘর্ষ হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
দুটি বিমান একই সময়ে রানওয়েতে ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
ইতোমধ্যে হানেদা বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে বিমানবন্দরের সব রানওয়ে বন্ধ করে দেয়া-সহ সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
আগুন লাগার কারণ কী? জাপান এয়ারলাইন্স গণমাধ্যম এনএইচকেকে জানিয়েছে, ‘ওই দুর্ঘটনায় কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমরা সেটা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি।’
মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সাংবাদিকদের জানান, ‘সরকার দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। জনসাধারণের কাছে দুর্ঘটনার বিষয়ে যথাযথ তথ্য দিতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’
এ সময় তিনি হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।
পরিস্থিতির বিষয়ে দেশটির দুর্ঘটনা, ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শিগেৎসু হিরাওকা বলেন, ‘জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানটি দক্ষিণ দিক থেকে রানওয়ে সি-তে অবতরণ করতে যাচ্ছিল। তখন রানওয়েতে জাপান কোস্টগার্ডের একটি বিমান ছিল এবং সেটার সাথে ধাক্কা লাগে। আমি এখনো নিশ্চিত জানি না কিভাবে সংঘর্ষ হয়েছে।’
দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডনের প্রফেসর অ্যালেসিও পাটালানো বলেন, ‘জাপানের বেশিরভাগ রানওয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো যেকোনো জরুরি বাহিনীর ফ্লাইট সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। তখন ওই বিমানগুলো বাণিজ্যিক বিমানের সাথে রানওয়ে ভাগ করে নেয়।’
ব্রিটেনের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির পরিবহন ব্যবস্থার অধ্যাপক গ্রাহাম ব্রেথওয়েট দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানে আগুনের ফুটেজ দেখার সময় মনে হয়েছে, বিমানটি অবতরণের পর কিছু দূর ছেঁচড়ে বা পিছলে সামনে এগিয়েছে। এতে বাম দিকের ইঞ্জিন শক পায়। সংঘর্ষে মনে হয়েছে, বিমানটির জ্বালানির লাইন ফেটে যায় এতে ভয়াবহ আগুনের সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে জ্বালানি লিক হয়ে পড়েছিল বলে মনে হয়েছে। এতে বিমান থেকে জ্বালানি বের হতে থাকে এবং আগুন বাড়তে বাড়তে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
জীবন মৃত্যুর ফারাক যখন মাত্র কয়েক সেকেন্ডদুর্ঘটনার যেসব ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে তাতে দেখা যায়, বিমানটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বিমানের জানালা দিয়ে আগুন ও ধোঁয়া বের হচ্ছে।
আগুন ধরার পর যাত্রীবাহী ওই বিমানের আরোহীরা প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু করে। আরোহীরা ধোঁয়ায় ভরা কেবিন থেকে পালাতে তখন জরুরি অবতরণের দরজা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা বুঝতে পেরেছিল, তাদের বেঁচে থাকা এবং না থাকা পরবর্তী কয়েক সেকেন্ডের ওপর নির্ভর করছে।
জাপান এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটি ছিল সব আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ওই বিমানে থাকা নতুন প্রযুক্তির কারণেই এতগুলো মানুষের জীবিত বেঁচে ফেরা সম্ভব হয়েছে।
তবে ছোট কোস্টগার্ড বিমানটির আরোহীরা ততটা ভাগ্যবান ছিল না।
যাত্রীরা যখন ঘটনার আকস্মিকতার সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন অনেকেই আবার তাদের বন্ধুদের এবং প্রিয়জনদের বলছিল যে তারা ঠিক আছে এবং পরবর্তীতে কী হবে তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এক যাত্রী প্রশ্ন করেন, ‘আমি জানতে চাই কেন এমনটা ঘটল?’
উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অন্য বিমানে উঠবেন না বলেও জানান।
দক্ষ উদ্ধার তৎপরতাদুর্ঘটনার কবল থেকে যাত্রীরা যেন জীবিত বাঁচতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য জাপান এয়ারলাইন্সের ক্রুরা যে তৎপরতা চালিয়েছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির পরিবহন ব্যবস্থা বিভাগের পরিচালক, অধ্যাপক গ্রাহাম ব্রেথওয়েট, জাপান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কেবিন ক্রু এবং পাইলটদের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ব্রেথওয়েট বলেন, ‘পরিবহন নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জাপানের একটি অসাধারণ রেকর্ড রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির উদ্ধারকাজ সফল হওয়াই জানান দেয় যে কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণে কতটা বিনিয়োগ করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্রুরা বিমানটি থেকে সবার শেষে বের হয় এবং কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় তারা এক অবিশ্বাস্য কাজ করেছে।’
এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘জাপানের সব বিমানবন্দরে জরুরি দমকলকর্মীরা তিন মিনিটের মধ্যে যে কোনো স্থানে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তত থাকে এবং বিমান পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রকৃত লক্ষ্যমাত্রা থাকে দুই মিনিট। প্রথমত, তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এমন কোনো অগ্নিকাণ্ড যেন মানুষের নিরাপদে সরে যাওয়াকে বাধাগ্রস্ত না করে। তারপরে অগ্রাধিকার হলো আগুন নিভিয়ে দেয়া।’
সাবেক পাইলট অ্যালিস্টার রোজেনশেইন বলেন, অন্য একটি বিমানের সাথে ‘খুব শক্তিশালী সংঘর্ষ’ সত্ত্বেও এ-৩৫০ রানওয়ে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। যার কারণে ওই বিমানটির পাইলটকে বিমানটি রানওয়েতে থামাতে বলা সম্ভব হয়েছে।
বিবিসির সাংবাদিক থিও লেগেটের মতে, এটি এয়ারবাস এ-৩৫০-তে ঘটে যাওয়া প্রথম বড় কোনো দুর্ঘটনা।
সাহায্য করেছে বিমানের আধুনিক প্রযুক্তিএয়ারবাস এ-৩৫০ হলো নতুন প্রজন্মের বিমানগুলোর মধ্যে একটি, যা প্রধানত কার্বন ফাইবার কম্পোজিট উপাদান থেকে তৈরি প্রথম বাণিজ্যিক বিমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই উপাদানের কারণেই আগুন ধরা সত্ত্বেও বিমানটি ভালোভাবে তা প্রতিরোধ করতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে।
এর ফলে বিমানটির ভেতরে বোর্ডে থাকা আরোহীরা পালানোর মতো সময় পেয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের ক্র্যানফিল্ড ইউনিভার্সিটির পরিবহন ব্যবস্থা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক গ্রাহাম ব্রেথওয়েট বলেন, ‘কেবিনের আসন এবং অন্য উপকরণগুলো অগ্নি-প্রতিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় আগুন থেকে অনেকটাই নিরাপদ ছিল।’
তার মতে, বিমানগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যেন বিমানের অর্ধেক জরুরি দরজা খোলা রাখা হলেও ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে সব যাত্রীকে সরিয়ে নেয়া যায়।
উড়োজাহাজটি নিরাপদ হওয়ার কারণেই আরোহীদের নিরাপদে বের হওয়া সম্ভব হয়েছে, মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ক্রুরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জরুরি দরজা খুলে দিয়ে মানুষকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করেছে। জরুরি অবতরণের স্লাইডটিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে স্ফীত হয়েছে।’
দুই বিমান বিশেষজ্ঞ বলেন, যাত্রীবাহী বিমানটির মূল কাঠামোটি সুরক্ষিত ছিল, যার ফলে ৩৭৯ জন যাত্রী ও ক্রুকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।
তাদের মতে, এ-৩৫০ কার্বন ফাইবারের মতো নতুন শক্তিশালী উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য অগ্নিশিখা সহ্য করতে পারে এবং যাত্রী ও ক্রুরা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারে।
ভ্রমণ-বিশেষজ্ঞ স্যালি গেথিন বলেন, বিমানের কাঠামো ডিজাইন করার সময় চ্যালেঞ্জ হলো এর ওজন কমানো এবং শক্তি বজায় রাখা।
তিনি বলেন, ‘এটি একদম অবিশ্বাস্য যে এ-৩৫০-এর কাঠামো এত দৃঢ় অবস্থা বজায় রেখেছিল, এটাই এর শক্তি প্রমাণ করে।’
নরকের মতো লাগছিলবেঁচে ফেরা যাত্রীদের ভিডিও এবং বিবৃতি থেকে দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনেকের জীবিত ফিরতে পারা বেশ আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে।
ওই বিমানে থাকা সুইডেনের নাগরিক ১৭ বছর বয়সী অ্যান্টন ডেইবে দুর্ঘটনার পরবর্তী বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন।
সুইডিশ সংবাদপত্র আফটনব্লাডেটকে তিনি বলেন, সংঘর্ষের কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো কেবিন ধোঁয়ায় ভরে যায়।
তিনি বলেন, ‘কেবিনের ধোঁয়া নরকের মতো লাগছিল। আসলে সেটা নরকই ছিল। আমরা সবাই মেঝেতে নুয়ে পড়ি তারপরে জরুরি অবতরণের দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের কোনো ধারণা ছিল না আমরা কোথায় যাচ্ছি তাই আমরা নিচে নামার পর দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যাই। খুব বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।’
তিনি, তার মা-বাবা এবং তার বোন অক্ষত অবস্থায় ধ্বংসাবশেষ থেকে পালাতে পেরেছিলেন।
এক নারী যাত্রী বেরিয়ে আসার পর তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জানান, তিনি বিমানে ছিলেন। ভাগ্যক্রমে তাকে টেনে আনা হয়েছিল এবং তিনি এখন নিরাপদ আছেন।
শুধুমাত্র একটি দরজা খোলাঅন্য এক যাত্রীর মতে, শুধুমাত্র একটি দরজা ব্যবহার করায় পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি জটিল ছিল।
তিনি বলেন, ‘ক্রুরা ঘোষণা করেছিল যে বিমানের পেছনের এবং মাঝখানের দরজা খোলা যাবে না। তাই সবাই সামনের দরজা দিয়েই নেমে গেছে।’
ছবি এবং ভিডিওগুলো দেখা যায়, যে মুহূর্তে বিমানের জরুরি অবতরনের স্লাইড খোলা হয়। তখনই আরোহীরা স্লাইডে ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করেন।
কেবিন কত দ্রুত খালি হতে পারে তার আরেকটি প্রধান কারণ, কেউ তাদের বহনযোগ্য লাগেজ বহন করছে বলে মনে হয়নি।
ক্রুরা দুর্ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কয়েক মিনিটে যাত্রীদের নিরাপদে বের করতে সক্ষম হন।
অ্যাভিয়েশন বিশ্লেষক অ্যালেক্স মাচেস্পষ্টভাবেরাস বলেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে ক্রুরা বুঝতে পেরেছিল যে কোন দরজাগুলো আগুন থেকে দূরে ছিল।
ওই কারণেই তারা অন্য কোনো বহির্গমনের দরজা খোলেনি। যেন সাধারণ মানুষ পালাতে পারে।
Kতিনি যোগ করেন, যাত্রীরা যদি আতঙ্কিত হয়ে যায় তখন এ ধরনের অভিযান এত দ্রুত পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
কেননা ওই সময় অনেক যাত্রী হয়তো তাদের লাগেজ দখল করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে যেত।
যাত্রী ইয়ামাকে জানান, এত ভয়াবহ পরিস্থিতি সত্ত্বেও যাত্রী ও ক্রুদের বের হতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি ১০ বা ১৫ মিনিটের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’
২৮ বছর বয়সী সুবাসা সুয়াদা বলেন, ‘আমি শুধু এটাই বলতে পারি যে এটি একটি অলৌকিক ঘটনা ছিল, আমরা মারা যেতে পারতাম।’
‘আমি ভেবেছিলাম আমি বাঁচব না’সাতোশি ইয়ামা নামে ৫৯ বছর বয়সী এক যাত্রী বলেন, তিনি অনুভব করেছিলেন যে বিমানটি ‘একদিকে হেলে পড়েছে’ এবং প্রথম সংঘর্ষে তিনি ‘বড় বিস্ফোরণ’ হতে দেখেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যাত্রী বলেন, ‘বিমানটি অবতরণের সময় মনে হয়েছিল এটি কিছু একটায় আঘাত করেছে। আমি জানলার বাইরে আগুনের বড় ফুলকি দেখেছিলাম। এর পরপরই কেবিনটি ধোঁয়ায় ভরে যায়।’
তৃতীয় এক যাত্রী কিয়োডো নিউজকে বলেন, ‘আমি একটি ঝাঁকুনি অনুভব করেছি, যেন আমাদের বিমান কিছু একটায় আঘাত করেছে। তারপরই আমরা অবতরণের মুহূর্তে হঠাৎ উঠে দাঁড়াই। আমি ভেবেছিলাম বাঁচব না।’
কেউ কেউ তাদের ফোনে ওই মুহূর্তের টুকরো টুকরো ধারণ করে।
বিমানটি থামার সাথে সাথে বেশ কয়েকজন যাত্রী একটি জ্বলন্ত ইঞ্জিনের লাল আভার ছবি তোলে।
অন্য একজন কেবিনের ভেতরের ভিডিও ধারণ করে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, যাত্রীরা চিৎকার করছে এবং কেবিন ক্রুরা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্দেশ করার চেষ্টা করছে।
সাথে সাথে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ক্যামেরার লেন্সকে ঝাপসা করে দেয়।
জাপানের গণমাধ্যম এনএইচকে-কে এক যাত্রী জানান, বিমানটি অন্ধকার হয়ে যায়, কারণ অবতরণের পরেই আগুনের শিখা তীব্র আকারে বাড়তে থাকে। এতে বিমানের ভেতরের পরিবেশ গরম হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি ভেবেছিলাম আমি বাঁচব না।’
সূত্র : বিবিসি