উড়োহাজার কেনার প্রস্তাবের যথাযথ মূল্যায়ন চায় বোয়িং
ইউরোপের কোম্পানি এয়ারবাসের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজ কেনার আলোচনার মধ্যে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং চায়, নতুন উড়োহাজার কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে তাদের প্রস্তাবেরও ‘যথাযথ’ মূল্যায়ন হোক।
ঢাকা সফররত বোয়িংয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, অন্য কোনো নির্মাতার চেয়ে তাদের উড়োজাহাজের দাম কম এবং পুরো প্রস্তাব আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী, যাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিমান লাভবান হবে।
চারটি যাত্রীবাহী এবং দুটি কার্গো উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানি, যা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিমান বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক সফরে তারা সরকারের কাছ থেকে মূল্যায়নের আশ্বাস পাওয়ার দাবি করেছেন।
গত মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে বোয়িং কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন কোম্পানির ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বিমানের সঙ্গে বোয়িংয়ের বর্তমান ও অতীত সম্পর্ক, কোম্পানির বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি এয়ারবাসের প্রস্তাবের বিষয়টিসহ দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার তুলনামূলক আলোচনা, বোয়িংয়ের নিরাপত্তা বিষয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ, দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলে খুচরা যন্ত্রাংশ পেতে অসুবিধা-শঙ্কা ও অর্থায়নসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
বোয়িংয়ের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান উয়্যার, ইউরেশিয়া ও ভারতীয় উপমহাদেশের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশ্বিন নাইডু এবং বোয়িংয়ের বিক্রয় পরিচালক কান্তি ভুবনাগিরি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বহরে নতুন সুপরিসর উড়োজাহাজ যোগ করার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ নিয়ে শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা দুই কোম্পানি তাদের আগ্রহ দেখিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ইউরোপভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাসের প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বোয়িংয়ের ঢাকা সফরকারী প্রতিনিধি দলটি সাংবাদিকদের সামনে আসে; নিজেরাই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এবং বিমানের জন্য তাদের প্রস্তাব কেন লাভজনক হবে সেসব দাবি তুলে ধরে।
বোয়িং কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমান ‘নাজুক’ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের উড়োহাজাজ বাংলাদেশ নিতে চাইলে আগের মত এবারও অর্থায়নে আগ্রহ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের।
প্রশ্নোত্তরে উঠে আসে বাংলাদেশের এফএএ ক্যাটাগরিতে উন্নতির বিষয়টিও।
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োহাজাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এফএএ তাদের মূল্যায়নে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) ক্যাটাগরি-২ এ রেখেছে। ক্যাটাগরি-১ এ উত্তরণ না হওয়ায় অনেক বছর হল ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে।
এক যুগ আগে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ কেনে বাংলাদেশ। তখন বেবিচককে এফএএ’র ক্যাটেগরি-১ এ উন্নীত করার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের এ উড়োহাজার নির্মাতা কোম্পানি, যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
সেই বাধা কাটাতে আবারও সহায়তা দেওয়ার কথা বলছেন বোয়িংয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এফএএ এর ক্যাটাগরি-১ পেতে নিজেদের খরচে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার শর্ত তাদের বিক্রয় প্রস্তাব রয়েছে।
আলোচনায় বোয়িং ও এয়ারবাসের তুলনামূলক প্রসঙ্গ চলে আসে বারবার।
বর্তমানে বিমানের বহরে থাকা ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৬টি বোয়িংয়ের। অন্য পাঁচটি স্বল্পপাল্লার ড্যাশ-৮০০ উড়োজাহাজ। প্রথমবারের মত বহরে এয়ারবাস যুক্ত করার আলোচনা চলছে, যা অনেকদূর এগিয়েছে বলে খবরে এসেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইউরোপের এ নির্মাতা কোম্পানির উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে অগ্রগতিও হয়েছে। গত মাসে বিমানের পর্ষদ সভায় তাদের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই, দরকষাকষিসহ ক্রয় প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এখন বোয়িং চাইছে, তাদের প্রস্তাবটিও পুরোপুরি মূল্যায়ন করুক বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বাংলাদেশের কাছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করে বলে খবর এলেও তা বেশিদূর এগোয়নি।