দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি বাংলাদেশের সুইচ ব্যাংক
দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের (এমসিসিএইচএসএল) বিরুদ্ধে সমবায় আইনে নিবন্ধন নিয়ে রীতিমতো ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের আর্থিকখাতে ব্যাপক অনিয়ম ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতর বাইরে এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
দেশের অর্থখাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এমন গুরুতর উদাহরণ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। যিনি ইতিমধ্যে সমবায়ে মাফিয়া হিসেবে পরিচিত। এ দিকে তিনি আইন বহির্ভূতভাবে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে কালো টাকার আমানত গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে আগষ্টিন পিউরীফিকেশন দায়িত্বভার গ্রহণের সময় প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদ ছিল ২২২ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৩০০ কোটি টাকার ওপরে।
সূত্রমতে, সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০০২,ও ২০১৩) এর ২৬ ধারায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ব্যতীত কোন সমবায় সমিতি উহার সদস্য ছাড়া অন্যকোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আমানত গ্রহণ বা ঋণ প্রদান করতে পারবে না। অথচ দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন আইন বহির্ভূতভাবে অখ্রীষ্টান ও অসদস্যদের সঞ্চয়ী বা বিনিয়োগকারী সদস্য নাম দিয়ে তাদের থেকে আমানত গ্রহণ করছেন।
এমনকি আইন ভঙ্গ করে তফসিলি ব্যাংকের আদলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথা সেন্ট্রাল অ্যাসোশিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস, লক্ষ্মীবাজার খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, তুমিলিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, নাগরী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, হারবাইদ খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, নয়ানগর খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, দড়িপাড়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, রাঙ্গামাটিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ধরেন্ডা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ভাদুন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, মঠবাড়ী খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রাথমিক ও কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতিরও আমানত রাখছে; যা সমবায় আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিশেষ করে মুসলিমসহ অন্যান্য অখ্রীষ্টান সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা চড়া সুদে আমানত রাখছেন। এমসিসিএইচএসএল-এর আমানতের বিপরীতে সুদের হার ব্যাংকের প্রচলিত সুদের হারের দ্বিগুণেরও বেশি। ১৫% পর্যন্ত সুদ দেয়া হয়। সমবায় অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে নিবন্ধকের সার্কুলার ও ব্যাংকের প্রচলিত সুদের হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদের হার নির্ধারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুদের হার বেশি, আমানতের বিপরীতে ব্যাংকের মত ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হয় না, আবার খ্রীষ্টান প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখলে কেউ জানতে পারবে না- এসব কারণে মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তা, সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা তাদের উপার্জিত কালো টাকা এখানে আমানত রাখা নিরাপদ মনে করে রাখছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এক্ষেত্রে খ্রীষ্টান সদস্যদের আইডি ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অখ্রীষ্টানদের আমানত গ্রহণ করা হয়। খ্রীষ্টানদের সদস্য হওয়া বা আমানত রাখার ক্ষেত্রে বিবাহিতদের ক্ষেত্রে গীর্জার বিবাহ সনদ এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে গীর্জার বাপতিস্ম সনদ দাখিল করতে হয়।
আর মুসলিমসহ অন্যান্য অখ্রীষ্টান আমানতকারিদের নামে খ্রীষ্টান হওয়ার ভুয়া এফিডেভিট তৈরি করে ডকুমেন্টস হিসেবে অফিসে সংরক্ষিত করা হয়। কেবল কালো টাকা আমানত রাখার জন্যে কাগজপত্রে তারা খ্রীষ্টান সাজার অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। এমসিসিএইচএসএল-এ মুসলিম নামে অনেক সঞ্চয়ী আমানত একাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। নিরাপদে কালো টাকা রাখার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ইতিমধ্যে এমসিসিএইচএসএল বাংলাদেশের সুইচ ব্যাংক আখ্যা পেয়েছে।
এছাড়া সমবায় সমিতি আইন-২০১৩ (সংশোধন)-এর ১৮(১) ধারা ভঙ্গ করে এমসিসিএইচএসএল ১৪টি শাখা কার্যালয় এবং সমবায় সমিতি বিধিমালা-২০০৪ এর ১২(২) বিধি লঙ্ঘন করে অনুমোদিত কর্ম এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ সকল বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তর পরিচালিত অডিট রিপোর্টে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমালোচনা করা হয়েছে।
বেআইনি আমানত গ্রহণ, শাখা পরিচালনা ও কর্ম এলাকার বাইরে কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধকরন এবং সমবায় আইন, বিধিমালা ও এমসিসিএইচএসএল’র উপ-আইন বহির্ভূত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে অডিট রিপোর্টে। দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে সমবায় অধিদপ্তর অবগত রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে মাসোয়ারা গ্রহণকারী কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বিঘ্নে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সমবায় প্রতিষ্ঠানটি।
প্রসঙ্গত, এমসিসিএইচএসএল’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশন সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১৩, হোমল্যান্ড, মিশিগানে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। বাড়ি ক্রয়ের সুবাদে তিনি টাকা পাচার করে আমেরিকায় নিয়ে গেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে মানি লন্ডারিং করেছেন।