মার্কিন নির্বাচন, বিভক্ত বাংলাদেশি কমিউনিটি

আসন্ন ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মার্কা হাতি আর ডেমোক্রেট দলের মার্কা গাধা। আলোচিত এই নির্বাচন নিয়ে পুরো বিশ্বের চোখ এখন এই দুই প্রতীকের প্রার্থী কমালা হ্যারিস ও ডনাল্ড ট্রাম্পের দিকে। কারণ দুই প্রার্থীর ভিন্ন ভিন্ন নীতি-নির্বাচনী ওয়াদা থাকায় পরবর্তী বছরগুলোর জন্য তাদের চেয়ারে বসা অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে।

তাই কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট? ডেমোক্রেটদের টানা দ্বিতীয় নাকি রিপাবলিকানদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার? ভোটার হিসেবে বাংলাদেশি কমিউনিটিরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই নির্বাচন। যদিও ট্রাম্প-কমালার সমর্থকদের মতো বাংলাদেশিরাও আছেন বিভক্তিতে ।

অভিবাসনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে রিপাবলিকান। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিকরা নাগরিক অধিকার, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উদারনৈতিক অবস্থান। তবে এই উদার ভূমিকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে অবাধে অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসার কারণে অভ্যন্তরীণ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক-সামাজিক এমনকি আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে।

অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় থাকলে সবার আগে দেশ। এই নীতিতে চলার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে আইন-শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব দেয়। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার কারণে অন্য কেউ অপরাধ করতে তিনবার ভাবে ।

নিউ ইয়র্কের কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ এন মজুমদার প্রকাশ্যে কমালাকে সমর্থন দিয়ে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রার্থী তিনি। ডেমোক্রেট ক্ষমতায় থাকলে অভিবাসনের পথ সহজ হয়, সাধারণ মানুষের উপকার হয়।’

বাইডেনের হোম কেয়ার-মেডিকেড-স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন বেনিফিটের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য কমালা হ্যারিসের জয়ের প্রয়োজন।’

নিয়মিত ভোট দিয়ে আসা কমিউনিটি নেতা টিটু আহমেদ জানান, তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। কারণ ইমিগ্রেশন, ট্যাক্স, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসহ অন্যান্য বিষয়ে তার নীতি আমেরিকার নিজের স্বার্থ রক্ষা করে। এছাড়া বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিও বদলাতে ট্রাম্পের প্রয়োজন বলেও মনে করেন সিলেট সদর থানা অ্যাসোসিয়েশনের এই সাধারণ সম্পাদক।

মিশিগান প্রবাসী মারুফ খাঁনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। বাইডেনের প্রত্যক্ষ সমর্থন থাকায় গাজায় ধ্বংস করে মুসলিম গণহত্যা চালানোর সাহস পাচ্ছে ইসরাইল এই তথ্য জানিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘মিশিগানে শুধু বাংলাদেশি না, মুসলিম কমিউনিটি এবার ভেবেচিন্তে প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দেবে।’

ব্রঙ্কসের বাসিন্দা বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আক্তার খান রাজু জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি ভালো হয়, তাহলে জীবনযাত্রার মানও ভালো হয়। বর্তমানে অনেক কারণেই বাইডেন সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাচ্ছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প দেশকে গুরুত্ব দেয়ার ইকোনমিক সেক্টরের উন্নতি ঘটে, ব্যবসার প্রতি সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করেন, তাই ট্রাম্প আসার পক্ষে তিনি।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা মাসুদ উর রহমান  জানান, বর্তমানে অভিবাসন একটি জটিল সমস্যা হয়ে উঠেছে, যা রাজনৈতিক এবং বাস্তব উভয় চ্যালেঞ্জকেই উপস্থাপন করেছে। সীমান্তে অবৈধ পারাপার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে, অপরাধ বাড়ছে, চাকরির বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা যদি সঠিক পথে থাকে তাহলে অপরাধ প্রবণতা কমে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রিপাবলিকানরা মেধার ভিত্তিতে ইমিগ্রান্ট পদ্ধতি চায় যা আমেরিকার জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরাইলের সমর্থনের কারণে ডেমোক্রেটদের প্রতি মুসলিম ভোটারদের ক্ষোভ আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তবে নির্বাচন নিয়ে সর্বশেষ যে পরিস্থিতি তাতে বলা যায় সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার যুক্তরাষ্ট্রে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.