বিমানবন্দর রিপোর্টার : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। নানা কাঠ খড় পুড়িয়ে অবশেষে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে।
ওসমানী বিমানবন্দরে নির্মাণ করা হবে নতুন টার্মিনাল ভবন, যার মাধ্যমে বছরে ২০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। আধুনিক স্থাপত্য শৈলী, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও দৃষ্টিনন্দন উপকরণ ব্যবহারের ফলে বিমানবন্দরটি নতুন রূপে আবির্ভূত হবে।
শাহজালালের দৃষ্টিনন্দক তৃতীয় টার্মিনালটি উদ্বোধনের জন্য চূড়ান্ত হয়ে আছে। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এই টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠানামা শুরু হবে। শুধু শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল আর সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের উন্নয়নই নয়, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যশোর, সৈয়দপুর সহ দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে এরকম উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন মাত্র নয় মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আফরোজের নেতৃত্বে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে এই উন্নয়ন সাধিত হয়। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, মেম্বার, পরিচালক সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় তিনি এই উন্নয়নের নেতৃত্ব দেন। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার নেতৃত্বে দেশে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তার এই উদ্যোগ আরো ছড়িয়ে পড়ে।
গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের সবচেয়ে জৈষ্ঠ প্রকৌশলী হিসেবে শহিদুল আফরোজকে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) নিয়োগ করা হয়। এর আগে এই পদে কর্মরত ছিলেন আব্দুল মালেক।
দায়িত্ব নিয়েই শহিদুল আফরোজ শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের জন্য কাজ শুরু করেন। আর মাত্র নয় মাসের মধ্যেই প্রকল্পের পিডিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে স্বপ্নের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের সবকিছু চূড়ান্ত করে ফেলেন।
বেবিচকের চেয়ারম্যান ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর জুন মাসে বিমান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যমনি হয়ে উঠেন শহিদুল আফরোজ। কর্তৃপক্ষের সিনিয়র জুনিয়র সব কর্মকর্তা কর্মচারী শহিদুল আফরোজ কে আপন করে নেন।
শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীই নন কর্তৃপক্ষের তালিকা ভুক্ত ঠিকাদারদের কাছেও প্রিয় পাত্র হিসেবে স্থান করে নেন শহিদুল আফরোজ। একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে শহিদুল আফরোজের কৃতিত্ব ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব বিমানবন্দরগুলোতে।
যোগদানের পরপরই শহীদুল আফরোজ সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স হিসেবে ঘোষণা দেন। সিভিল এভিশনের বিভিন্ন শাখায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ করে দেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে আফরোজ নিজেও ঘুষ নিতেন না কাউকে ঘুষ নিতেও দিতেন না। এ কারণে বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলতে শুরু করে।
প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে তিনি প্রতিটি প্রকল্পের কাজ মনিটরিং করতেন, সাইট ভিজিট করতেন। যেকোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর পর তিনি সরেজমিনে নিজে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা মনিটরিং করে প্রতিবেদন দিতেন। তার প্রতিবেদনের পর ঠিকাদারদের বিল চূড়ান্ত হত।
এতে ঠিকাদাররাও যথাসময়ে বিল পেয়ে যেতেন। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ঠিকাদার কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠেন।
মেধাবী প্রকৌশলী শহিদুল আফরোজ সিভিল এভিয়েশন এর সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হলেও তিনি ছিলেন খুবই সহজ সরল এবং শান্ত প্রকৃতির। যার কারণে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শুধেন্দু বিকাশ গোস্বামীও তার সঙ্গে চরম প্রতারণা করেন।
প্রতারণার অংশ হিসেবে শুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী ২০১০ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের সংসদীয় কমিটিকে কৌশলে ম্যানেজ করে এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী এমপি কে ঘুষ দিয়ে নিজেই সিনিয়রিটি নিয়ে নেন। এক পর্যায়ে বড় ধরনের আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং এর মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলী বনে যান।
এরপর ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দুর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে সিভিল এভিয়েশনে কাজ করেন। এরপর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী এমপিদের মাধ্যমে শহিদুল আফরোজ এর উপর নানাভাবে মিথ্যা ও হয়রানী মূলক নির্যাতন শুরু করেন।
শহিদুল আফরোজ যাতে চাকরি ছেড়ে চলে যান সেজন্য নানাভাবে হুমকি-ধমকীও দেওয়া শুরু করেন। স্বৈরাচারের দোসর শুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী এক পর্যায়ে শহিদুল আফরোজ এর বিরুদ্ধে কক্সবাজার বিমানবন্দরের জেনারেটর ক্রয়ের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেন।
যদিও এই ঘটনার সঙ্গে শহিদুল আফরোজের কোন ধরনের সম্পর্ক ছিল না। সহজ সরল কর্মকর্তা শহিদুল আফরোজের বিরুদ্ধে শুধু মিথ্যা মামলা করেই ক্ষান্ত ছিলেন না গোস্বামী। তাকে জেলহাজতেও পাঠান।
মিথ্যা মামলা দিয়ে দেড় মাস জেলের ভাত খাওয়ান । সাবেক প্রধান প্রকৌশলী গোস্বামী এতটাই ভয়ংকর ছিলেন তিনি শহিদুল আফরোজকে সাড়ে চার বছর চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে রাখেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যার মামলা সাজাতে গিয়ে তিনি নিজেই দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে যান। মাত্র এক দিনের নোটিশে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেন আব্দুল মালেক। জানা গেছে সেখানেও হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। এক পর্যায়ে মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পান শহিদুল আফরোজ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত মামলার কাগজপত্র ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান শহিদুল আফরোজ এর বিরুদ্ধে সব মামলা সাজানো। এরপর মানবিক কারণে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।