অভিযুক্ত তিন কেবিন ক্রু‌’র ব্যপারে নিশ্চুপ বিমান প্রশাসন

নেপথ্যে এক প্রভাবশালী পরিচালক

শামীম আহমেদ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর ৩ জন কেবিন ক্রুর বিরুদ্ধে ঢাকা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ রয়েছে যে তারা বিমানের ফ্লাইট ব্যবহার করে নিষিদ্ধ ও অবৈধ জিনিষ বহন করেছে। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী কেবিন ক্রু তাবরেজ এর কাছে থেকে দুই বোতল গর্ডন জিন মদ, কেবিন ক্রু তিথির কাছ থেকে ১ বোতল এবসুলেট ভডকা মদ এবং কেবিন ক্রু এলীন এর শরীর থেকে অবৈধ স্বর্ণ  কাস্টমসের হাতে আটক হওয়ার ডিএম কাগজ রয়েছে।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি যোগ দেওয়া বিমানের এক প্রভাবশালী পরিচালকের বিশেষ প্রভাবের কারণে কাস্টম কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের নামে মামলা না করে শুধুমাত্র তাদের অবৈধ মদ ও স্বর্ণ জব্দ করে তাদের ছেড়ে দেয়। এ সময় বিমান সিকিউরিটি টিম উপস্থিত থেকে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেও তারা নিশ্চুপ  রহস্যময় ভুমিকা পালন করেছেন।

ইতিপূর্বে মাদক বহন ও স্বর্ণ পাচারের দায়ে অভিযুক্ত বিমানের অসংখ্য ক্রু বরখাস্ত এবং শাস্তি পেলেও এইবারে এর ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে। যা গোটা বিমান জুড়ে তীব্র সমালোচনা তৈরী করেছে।

সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে এই তিন ক্রুর সখ্যতা ও ছবি থাকায় এবং তাদের ছেড়ে দিতে বিভিন্ন তদবির আসায় থমকে গেছে তাদের বরখাস্তের প্রক্রিয়াও।  পরিচালক গ্রাহক সেবা জনাব হায়াত উদ দৌলা খান এর এইরুপ দ্বিচারিতায় ক্ষুব্ধ বিমানের সর্ব স্তরের কর্মচারীরা। জানাগেছে তিনি ওই প্রভাবশালী পরিচালকের কারণে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু জানান বর্তমান সরকারের সময়ে এই তিন অভিযুক্ত ক্রুদের শাস্তির আওতায় না এনে তাদের পূনর্বাসন করলে বিমানের ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায় রচিত হবে। অনেক ক্রু তখন এ সকল কাজে উদ্বুদ্ধ হবে এবং বিমানের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্য হবে।

অপর দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন কেবিন ক্রু শিডিউলিং এর ম্যানেজার কেবিন ক্রু আনিকার কাছে অসহায় আত্নসমর্পন করছে বিমানের প্রশাসন। আওয়ামীলীগের প্রভাব বিস্তার করে যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও প্রমোশন বাগিয়ে নিয়েছিলেন এই আনিকা যার সাবেক নাম ছিল কহিনুর আলম। নিজের অপকর্ম ঢাকতে নিজ নাম পরিবর্তন করে আনিকা নাম ধারণ করে চাকুরী করে চলেছেন তিনি।

তদবিরবাজ এই নারী কেবিন ক্রুর বিভিন্ন অপকর্ম জাতীয় খবরের কাগজে ছাপা হলে নড়ে চড়ে বসে বিমান প্রশাসন। আনিকার সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমানে তৎপর হয় বিমান, কিন্তু ব্যবস্থা নিতে গিয়েও পিছু হটে বিমান কর্মকর্তারা, কারণ তদবিরে এবার যায়গা করে নেয় বড় রাজনৈতিক দলের এক সাবেক স্পিকার। তদবির আসে বিমানের টপ ম্যানেজমেন্ট এর কাছে।

প্রশাসনে ৫ই আগস্ট এর পর বিভিন্ন সংস্কার হলেও বিমানে নেই কোন সংস্কার। শিডিউলিং বিভাগেও আনিকার নজিরবিহীন অনৈতিক হস্তক্ষেপে ফ্লাইট সার্ভিসে চলছে অসন্তোষ। সম্প্রতি একটি ম্যাঞ্চেস্টার ফ্লাইটে কেবিন ক্রু ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে এক ঊর্ধতণ কর্তপক্ষের মন পেতে রোস্টারের বাইরে ৫ জন নারী ক্রু ও অন্য দুজন ইউনিয়ন এক্সিকিউটভ দিয়ে ফ্লাইট ডেটেইল করেন আনিকা।

ফিরতি ফ্লাইটে সেই ক্রু সেট এর দুজন মদ সহ আটক হয় কাস্টমসের হাতে। এছাড়াও অনৈতিক কাপল ফ্লাইট চলমান রেখে ফ্লাইট সার্ভিসের পরিবেশকে দূষিত বাতাসে রুপান্তর করেছেন তিনি। ভুক্তভোগী কয়েকজন ক্রু এভিয়েশন নিউজের কাছে এই অভিযোগ করেছেন যে ফ্যাসিবাদের কট্টর সমর্থক আনিকার অপসারণ না করে বিমানের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাগণ আনিকার চাকুরি অবসর পরবর্তী আরো দুই বছর চুক্তিভিত্তিক করার পক্ষে কাজ করে চলেছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.