বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশকে নারায়ণগঞ্জে দাফন

বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশকে নারায়ণগঞ্জেদাফন সম্পন্ন।

চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহত পলাশ আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন নিহত পলাশের বাবা। এর পর সব প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়।

নিহত পলাশের চাচা দ্বীন ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিমান ছিনতাইয়ের মতো এত বড় ঘটনা পলাশের একার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এর পেছনে বড় কারো ইন্ধন থাকতে পারে।

এর আগে পলাশের মরদেহ গ্রহণ ও দাফন করতে আপত্তি জানান তার বাবা পিয়ার জাহান। তিনি জানান, পাঁচ বছর ছেলের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক নেই। ওর উচ্ছৃঙ্খল জীবন নিয়ে এতটাই অতিষ্ঠ ছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি কামনা করেন, হয় ছেলে ভালো হোক, না হয় মারা যাক।

উল্লেখ্য, রোববার বিকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে ক্রুসহ ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে বিমানটি।

বিমানের চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটটি যখন মাঝ আকাশে, তখন এক ব্যক্তি পাইলটকে অস্ত্র ঠেকিয়ে উড়োজাহাজটি জিম্মি করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জরুরি অবতরণ করা হয়। জরুরি অবতরণের পরপরই রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।

পরে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হলেও একজন ক্রুকে ওই ছিনতাইকারী জিম্মি করে রাখে বলে সূত্রের খবর।

পরে বিমানবন্দরে যায় সোয়াত টিম ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট। ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসও।

ঘটনাস্থল থেকে একাধিক সূত্র জানায়, বিমানের বিজি-১৪৭ নম্বর ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা। কিন্তু উড্ডয়নের পরপরই এ ঘটনা ঘটে।

এরপরই দ্রুত ফ্লাইটের সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়। বিমানটি রানওয়েতে অবস্থান করে এবং সেটি ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, যাত্রীদের নামিয়ে আনলেও সাগর নামে একজন ক্রু ও ছিনতাইকারী বিমানটির ভেতরে রয়ে যান।

বিমানটি রোববার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে জরুরি অবতরণ করা হয়। তাৎক্ষণিক সেখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ করা হয় বলে জানান বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ।

পরে সেনা স্পেশাল ফোর্স ও নৌ কমোডর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে নৌ কমোডর দলের অভিযানে সন্দেহভাজন ওই ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করা হয় এবং আহতাবস্থায় ক্রু সাগরকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিমানটির সব যাত্রী-ক্রুরা সুস্থ রয়েছেন। বিমানের কোনো ক্ষতিও হয়নি।

এদিকে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানের ভেতরে অভিযান চালানোর সময় ওই ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় কিন্তু সে অস্বীকৃতি জানালে গুলি চালানো হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিমানে ক্রুসহ ১৪৮ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে বের হয়ে এসেছেন।

এর আগে রাত ৮টার দিকে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৭টা ১৭ মিনিটে অভিযান পরিচালনা করে। এটি শেষ হয় ৭টা ২৫ মিনিটে। এ সময় ছিনতাইকারীকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়।

রোববার রাতে নিহত ওই যুবকের পরিচয় নিয়ে একাধিক তথ্য জানানো হয়, যা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। প্রথমে বলা হয়, তার নাম মাহাদী। পরে বলা হয় মো. মাজিদুল। তবে টিকিটে তার নাম মো. মাজিদুল লেখা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়। কিন্তু সোমবার যে তথ্য এল, তাতে দেখা যাচ্ছে তার নাম মাহাদী ও মাজিদুল কোনোটিই নয়; তার নাম মো. পলাশ আহমেদ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.