শাহজালাল বিমানবন্দরে অডিট : নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি দল।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টের (ডিএফটি) উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। বিমানবন্দরটিতে তিনদিনের অডিট কার্যক্রম শেষে নিরাপত্তার প্রায় সব ক্ষেত্রে আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলে গত বৃহস্পতিবার মৌখিকভাবে জানিয়েছে ডিএফটি প্রতিনিধি দলটি। শিগগিরই এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করবে ডিএফটি।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, চার মাস অন্তর শাহজালাল বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসছে ডিএফটি। ডিএফটির অডিট কার্যক্রম শুরু হয় গত মঙ্গলবার। ডিএফটির দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাও। এবারের অডিটে ডিএফটি সদস্যরা ঢাকায় অবস্থান করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করেন। শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের প্রবেশমুখ, ভেতরের স্ক্যানার সিস্টেম, চেকইন কাউন্টার, অ্যাপ্রোন, কার্গো ও চার দেয়ালের সীমান্ত এলাকার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পয়েন্ট পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় তারা বিমানবন্দরের চারপাশের সীমানা দেয়ালও পরিদর্শন করেন।
প্রথম দিন মঙ্গলবার শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে অডিট কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিনিধি দলটি নিরাপত্তার প্রতিটি সূচকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। বিমানবন্দরের প্রতিটি প্রবেশপথ পরিদর্শন করেও সন্তুষ্টি জানান তারা। তবে তারা ৮ নং গেট দিয়ে যান চলাচলে আরো কিছু সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ওই গেট দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনে এয়ারফ্রেশনার ও পানি না রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সব ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটের দুটি লাগেজের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ডিএফটির প্রতিনিধিরা। গত বুধবার সকালে অডিট চলাকালে বিমানের লন্ডনগামী ওই ফ্লাইট পরিদর্শন করেন প্রতিনিধিরা। এ সময় কাগজপত্রে যা লেখা তার চেয়ে বেশি লাগেজ পাওয়া যায়। পরে অতিরিক্ত লাগেজের বিষয়ে আপত্তিও জানানো হয়। দুটো লাগেজের মার্কিংয়ে ভুল ছিল। ৩৯১টি লাগেজের স্থলে ৩৯৪ লেখা হয়েছিল।
বেবিচক সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর এম মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, এবারের অডিটে ডিএফটি প্রতিনিধি দল বিমানবন্দরের কার্গো শাখায় অপারেশন, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বেশি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। নিরাপত্তা ব্যবস্থার এ উন্নতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। বেবিচকের ক্যাটাগরি-১-এ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ইস্যু হিসেবে কাজে আসবে। তিনি বলেন, গত দুই বছরে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এটি ধরে রাখতে আরো চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ একনেক বৈঠকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জুনের আগেই দেশের সব বিমানবন্দরের ডগ স্কোয়াডসহ বডি স্ক্যানার, ইডিএস ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে।
উল্লেখ্য, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সে দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিপুল কার্গো আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দুই বছর ধরেই অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টের (ডিএফটি) পরামর্শ অনুযায়ী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারী ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়াল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়াল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), ফ্যাপ ব্যারিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, ব্যারিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) ও এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি) যন্ত্রপাতি বসানো হয়।
সূত্রঃ বণিক বার্তা