মাঝ আকাশে বাংলাদেশি নারীকর্মীর মৃত্যু

দেশে ফেরার পথে মাঝ আকাশে উড়োজাহাজে মারা গেছেন লেবাননপ্রবাসী বাংলােদশি এক নারী কর্মী। তাঁর নাম মালেকা বেগম। তিনি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের হবিজ উদ্দিন ফকিরের মেয়ে।

লেবানন রাজধানী বৈরুত থেকে সংযুক্ত আর আমিরাতের সারজাহ হয়ে দেশে ফেরার পথে এয়ারএরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে হৃদরোগে আক্তান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এ জন্য মাঝপথেই মিশরে জরুরী অবতরণ করতে হয়েছে উড়োজাহাজকে।

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন আকাশযাত্রাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যে সাড়ে ৭টায় বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার আরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে মালেকা বেগমসহ ৫০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন । এরা সবাই ছিলেন দূতাবাসের সেচ্ছায় দেশে ফেরা কর্মসূচীর আওতায় নিবন্ধিত কাগজপত্রবিহীন অবৈধ প্রবাসী।

রবিবার সকালে বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরনের সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু উড্ডয়নের প্রায় ২ ঘন্টা পরেই মিশরের আকাশসীমায় মালেকা বেগম হুদরোগে আক্রান্ত হন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এ সময় পাইলট ফ্লাইটটিকে মিশরের রাজধানী কায়রোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরী অবতরন করে। সেখানে মালেকা বেগমের মরদেহ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বাকি যাত্রী নিয়ে শারজাহ বিমানবন্দরের উদ্দ্যেশে রওনা দেয় ফ্লাইটটি।

কায়রোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মরদেহ দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

কায়রো দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে খবর পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য সবধরণের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত করা হচ্ছে। ইমিগ্রেসন ছাড়পত্রের সঙ্গে সঙ্গে একই উড়োজাহাজ কিংবা সুবিধাজনক যে কোন উড়োজাহাজে মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

বৈরুত দূতাবাসের শ্রম সচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কায়রোর বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই লেবাননপ্রবাসী এই রেমিট্যান্সযোদ্ধার মরদেহ দেশে পৌঁছে যাবে।”

জানা যায়, নারীকর্মী মালেকা বেগম দীর্ঘদিন এদেশে কাগজবিহীন ছিল। তাই দেশে যেতে পারছিলেন না। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বৈরুত দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় দেশে যাবার জন্য বৈরুত দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করেন। সিরিয়াল ছিল ৬৫১।

প্রায় ৫ মাস অপেক্ষায় থাকার পর লেবাননের জেনারেল সিকিউরিটি থেকে অন্যদের সঙ্গে মালেকা বেগমের জন্য দেশে যাওয়ার ছাড়পত্র আনে বৈরুত দূতাবাস।

শেষ পর্যন্ত কাগজপত্রবিহীন অবৈধ ‘যন্ত্রণার’ দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে রওনা হতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাঝপথেই থেমে গেছে এই রেমিট্যান্সযোদ্ধার দেহঘড়ি।

পরিবার থেকে জানা যায়, ভিসাবিহীন থাকার কারণে মালেকা বেগম দীর্ঘদির দেশে যেতে পারেনি। তাই এবার দেশে ফেরার খবরে স্বামী সন্তানসহ পুরো পরিবার অপেক্ষায় ছিলেন প্রিয়জনের। বাড়িতে নেওয়ার জন্য গাড়িও নিয়ে বিমানবন্দরেও গিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা।

জীবন্ত মালেকা বেগমকে আর পাবেন না পরিবার । এখন অপেক্ষা প্র্রহর কফিনে বন্ধী মরদেহের।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.