ভ্রমণ বাতিল করছেন দেশী-বিদেশী পর্যটকরা

করোনাভাইরাস আতঙ্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পর্যটন শিল্পে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন, তারাও একে একে তা বাতিল করছেন।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলতি পর্যটন মৌসুমে দেশী বিদেশী পর্যটক নিয়ে আসার উদ্যোগ আপাতত স্থগিতই বলা যায়। এ সময় কেউ কোনো দেশে খুব প্রয়োজন না হল ভ্রমণ করবে না। এরই মধ্যে ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীসংখ্যা কমতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো এশিয়ায় পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পাবে। এর একটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। পুরোপুরি ভাইরাস নির্মূল করতে না পারলে এশিয়ার পর্যটন খাত সহসা গতি পাবে না।

ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান বিজকন হলিডেজের সিইও তসলিম আমিন শোভন এ প্রসঙ্গে  বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাস আতঙ্কে পর্যটকরা চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ভ্রমণ বাতিল করছেনই, পাশের দেশ ভারতেও অনেকে যেতে চাচ্ছেন না। চলতি সপ্তাহে আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের দার্জিলিং যেতে চেয়েছিলেন এমন ৬৮ জন ও সিকিমে যেতে চাওয়া ৩০ জন তাদের ট্যুর বাতিল করেছেন। এমনকি ভুটানে যেতে চাওয়া ৫২ জন বাংলাদেশী পর্যটকও তাদের ট্যুর বাতিল করেছেন। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বেশি হওয়ায় ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে যেতে চাচ্ছেন না পর্যটকরা। চলতি মাসে ভিয়েতনাম থেকে ১১ জনের আসার কথা থাকলেও এরই মধ্যে তারা ট্যুর বাতিল করেছেন।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক মনিরুজ্জামান মাসুম জানান,

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রামক হওয়ায় আতঙ্কটা বেশি। সে কারণেই ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে এর বিরূপ প্রভাবের শঙ্কাও বেশি। ফলে কেউ এ সময় ভ্রমণের পরিকল্পনা করছে না। এটি শুধু বিদেশীদের মধ্যে নয়, বাংলাদেশীরাও বিদেশে যেতে চাচ্ছেন না। এরই মধ্যে বাংলাদেশী কিছু গ্রুপ তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছে।

ট্যুর অপারেটররা বলছেন, বিদেশী পর্যটকরা না আসায় শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই কমপক্ষে শতকোটি টাকার বেশি ক্ষতি হবে। আর আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে।আবার বাংলাদেশে চীনের অনেক নাগরিক ভ্রমণে আসেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের আগমন এখন একেবারেই বন্ধ।  এখান থেকে চীনেও প্রচুর পর্যটক ঘুরতে যান। সেটাও হচ্ছে না। করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিশ্ব ট্যুরিজমের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব ও ট্যুর অপারেটর

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক পরিচালক তৌফিক রহমান জানান, রাশিয়া ও চীন

থেকে অনেক বিদেশী পর্যটক দেশে আসার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটনসংশ্লিষ্ট অনেকেই। তিনি বলেন, আমাদের স্লোভেনিয়ার একটা গ্রুপ ট্যুর বাতিল করছে। যদিও স্লোভেনিয়াতেও করোনাভাইরাস নেই আর বাংলাদেশেও নেই। কিন্তু এখন ওই গ্রুপটি বলছে, তাঁরা এ মুহূর্তে আর আসবে না। যদিও ট্যুর অপারেটর হিসেবে আমরা হোটেল বুকিং, ট্রেনের টিকিট, সুন্দরবনের ফি সব জমা দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ইউক্রেন, পোল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশের গ্রুপ ভ্রমণ বাতিল করেছে। আবার চীনের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়ার পর তাইওয়ানের একটা গ্রুপ বাংলাদেশ আসতে ভয় পাচ্ছে। যদিও খোঁজ নিয়ে জেনেছি তাইওয়ান থেকে এলে বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেতে কোনো সমস্যা নেই।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.