‘গুলিস্তানের দখলকৃত ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদে করা হবে’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে ওই এলাকার সিনেমা হল রোডে গত তিন মাসে সাত বারেরও বেশিবার চালানো হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু দখল হয়ে যাওয়া রাস্তা ও ফুটপাত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি । অভিযান সকালে চললে তার ঘণ্টা দুয়েক পরই আবারও চাঁদার বিনিময়ে স্থানীয় চাঁদাবাজরা দোকান বসিয়ে দিচ্ছেন। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। আগের চিরচেনা চিত্রে ফিরছে গুলিস্তান সিনেমা হল সড়কটি।
সিনেমা হল সড়কটি মাজার লিংক রোড হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল থেকেই বেশ জট থাকে সড়কটির দুপাশে। ব্যস্ততম এলাকায় হওয়ায় গুলিস্তান থেকে মাজারের সামনে বিভিন্ন রুটের বাস ধরতে যাত্রীরা স্বল্প পথ হিসেবে এ সড়কটিকেই বেছে নেন।
ফলে পুরো সড়কটিতে বেশ চাপ থাকে মানুষের। একে তো মানুষের চাপ, তার উপর রাস্তা দখল করে পাদুকা,ফলমূল,পুরনো ও নতুন ভাসমান কাপড়ের দোকানিদের দখলদারির কারণে রাস্তাটির হযবরল অবস্থা।
ভাসমান দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তাটি দখল করে তারা বসলেও তাদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। তবে এ চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ হয় দোকান ভেদে। বড় দোকান হলে দুই থেকে চারশ’ আর ছোট দোকান হলে ত্রিশ থেকে ষাট টাকা।
তারা আরও জানান, প্রতিদিন এ সড়কে চাঁদা ওঠে প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকার মতো। তবে চাঁদা তোলার পরই সেই চাঁদার ভাগ যায় স্থানীয় পুলিশ,ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের পাতি নেতা ও চাঁদা উত্তোলনকারীর হাতে।
দাঁতের ব্রাশ বিক্রেতা সামি বলেন,আগে বিশ টাকা দিলেই হইতো কিন্তু এখন দিতে হয় ত্রিশ টাকা।এর মধ্যে কয়েকবার উচ্ছেদ চলার পর নাকি ব্যয় বাইড়া গেছে তাই বেশি চাঁদা হয়।
কার নির্দেশে এ চাঁদা আদায় করা হয় এবং কে এসব লোক নিয়োগ দিয়েছে তা বলতে চাননি সামি।
অবশ্য সামি না জানালেও ঠিকই জানালেন ভাসমান পায়ের মোজা বিক্রেতা রবিন।
রবিন বলেন, ‘ট্যাকা তো অনেক জনই লয় তয় আ.লীগের কি দলের এক সভাপতি, তার নির্দেশে এক পোলা প্রতিদিন দুপুরে ট্যাকা লইয়া যায়।’
আপেল ও কমলা বিক্রেতা আজগার জানান, যারা এ সড়কে ফলমূলের দোকান করেন তাদের দিতে হয় দুইশ’ টাকা করে। কারণ এখন আগের চেয়ে ঝুঁকি বেশি।
ঝুঁকি শব্দটির ব্যাখ্যাও দিলেন এ ফল বিক্রেতা।
মেয়রের ঘোষণার পর কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। আবার কখন হঠাৎ করে অভিযান চলে তার কোন ঠিক নেই। এই অনিশ্চয়তাকেই তারা ঝুঁকি বলে জানেন।
এ কারণে পুলিশ, স্থানীয় নেতা ও উপরের লেবেলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতেই তাদের কাছ থেকে বেশি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলেও জানালেন তিনি।
দোকানিরা আরও জানালেন,মেয়রের ঘোষণায় চাঁদা কমেনি বরং বেড়েছে। চাঁদা আদায়কারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তারা চাঁদার পরিমাণকে দ্বিগুণ করে দিয়েছেন নিরাপত্তা দেয়ার অভিযোগে।
‘আগে দোকান নিয়া বসলে দিতে হইতো একশ’ ট্যাকা। আর অহন দিতে হয় দুইশ’ ট্যাকা। তিন মাস আগেও এমন ছিল না। মেয়রের ঘোষণায় আমরা (ভাসমান দোকানিরা) তো ভাবছিলাম চাঁদা কইমা যাইবো আর চাঁদা দিতে হইবো না। অহন দেখি চাঁদার পরিমাণ আগের চাইয়া দ্বিগুণ হইয়া গেলো।’
চাঁদা দ্বিগুণের ব্যাপারে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আঙ্গুরের দোকানি মোসাদ্দেক আলী।
জুতা বিক্রেতা বোরহান উদ্দিন বলেন,চাঁদা না দিলে তো ভালই চলতো ব্যবসা। যে চাঁদা তোলা হয় তার অর্ধেকেই যায় পুলিশের পকেটে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালিদ আহম্মেদ বলেন, পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা এসব দখলে সহায়তা করছে বলে অনেক অভিযোগই আমাদের কাছে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা পারছি না উচ্ছেদ করতে। অভিযান চালানোর পর পুলিশকে ওই জায়গাগুলোতে নজর রাখতে বলি। কিন্তু তারা তা করেন না।