পোশাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি

downloadকর্মসংস্থান বাড়ানোর মাধ্যমে উন্নয়ন বেগবান করতে এখনও বাংলাদেশের তৈরি পোশাককেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খাত মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির এক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, কৃষিসহ অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সবচেয়ে বেশি। এ খাতের মাধ্যমেই শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো যেতে পারে। শুধ বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বাকি তিনটি পোশাক রফতানিকারক দেশ ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য।

‘সেলাই থেকে সমৃদ্ধি? দক্ষিণ এশিয়ার তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ নামে প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদন সম্পাদনা করেছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার লিড ইকোনমিস্ট গ্গ্নেডস রোপেজ এসিভেডো ও টেক্সাস এন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেমন্ড রবার্টসন। এতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের পোশাক খাতের সম্ভাবনার ওপর বিস্তারিত বিশ্লেষণ স্থান পেয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে পোশাকের বিশ্ববাজারে চীনের অবস্থানকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রফতানি ও কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক নানা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চীনের পোশাকের দর কিংবা এ খাতে মজুরি যদি ১০ শতাংশ বাড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে প্রায় ১৪ শতাংশ। কর্মসংস্থান বাড়বে প্রায় ৯ শতাংশ। পুরুষ শ্রমিকদরে ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আর নারী কর্মসংস্থান ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়বে। তবে চীনের পোশাকের মূল্যবৃদ্ধি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রফতানিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, পোশাক রফতানিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিশ্বে মোট পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে কারখানার পরিবেশসহ সামগ্রিক কমপ্লায়েন্সের উন্নতি, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বব্যাংকের বাকি পরামর্শের সঙ্গে একমত হলেও বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। সমকালকে তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগের দরকার নেই। বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে বস্ত্র খাতে। কেননা ওভেন ফেব্রিক্সের অন্তত ৬০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। পোশাক কারখানায় নীতিগত সহায়তা দিলে এবং অবকাঠামো সংকটের সমাধান করলে দেশি উদ্যোক্তারাই বিনিয়োগ করবেন।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের করপোরেট কর ছিল ১০ শতাংশ। বর্তমানে তা ৩৫ শতাংশ। সরকারের কাছে তারা আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছেন। ৩৫ শতাংশ কর থাকলে কেউ নতুন বিনিয়োগ করবে বলে মনে হয় না। বিনিয়োগ বাড়লে

কর্মসংস্থান বাড়বে। চীনের মজুরি কিংবা পোশাকের দর বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক আছে বলে তিনি মনে করেন না।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন খাতে ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান রয়েছে পোশাক কারখানাগুলোতে। শ্রমনির্ভর এ খাতে আরও বেশি এবং উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় পোশাক খাতে নারীদের কর্মসংস্থান বেশি। নারীদের কর্মসংস্থান আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষত বাংলাদেশের পোশাক খাতে এত অগ্রগতির পরও এর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। এ খাতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলছে। বিজিএমইএর হিসাবে, তৈরি পোশাক খাতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ৪০ লাখ লোকের, যার ৮৫ শতাংশই নারী। ১০ বছর আগে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ। বিজিএমইএর মতে, পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমশক্তির অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে আরও বলা হয়, এখনও তৈরি পোশাকের বাজারে চীনের আধিপত্য রয়েছে। ২০০০ সালে বিশ্ব রফতানিতে চীনের অংশ ছিল ২৫ শতাংশ। ২০১২ সালে তা ৪১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে আগামী দিনে চীনের অংশীদারিত্ব কমতে পারে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ক্রেতাদের ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা চীন থেকে আমদানি কমাতে চায়। চীন সাম্প্রতিক সময়ে ইলেকট্রনিক্সের মতো উচ্চ মূল্য সংযোজন পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। এ লক্ষণ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পোশাক খাতের জন্য ভালো বার্তা।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক খাতে কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিকদের দর কষাকষির ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকার, ক্রেতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় এ খাত কারখানা নিরাপত্তায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে শ্রমিকদের দর কষাকষির অধিকার ইস্যুতে তেমন উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ এখন কম উৎপাদন ব্যয়ের সুবিধা ভোগ করছে। এখন দরকার সামাজিক কমপ্লায়েন্স, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অধিকতর নীতি সহায়তা দেওয়া।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.

EN