ইমেইল জালিয়াতিতে ১০ কোটি ডলার খুইয়েছে মার্কিন কোম্পানি

Email+Fraudইমেইল জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে সাত কোটি ৪০ লাখ ডলার ইতোমধ্যে ওই কোম্পানি ফিরে পেয়েছে। বাকি প্রায় আড়াই কোটি ডলার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে।

এই অর্থ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে অবস্থিত ইউএস ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়েরের পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

এই ঘটনাকে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনাকারী বা অনলাইনে লেনদেনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ইমেইল জালিয়াতির অন্যতম বৃহৎ ঘটনা উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এভাবে সাইবার জালিয়াতি ক্রমশ বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই গত সপ্তাহে কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ইমেইল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুইশ ৩০ কোটি ডলার হারিয়েছে।

এই মার্কিন কোম্পানির অর্থ সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে গত বছর অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে। সাইপ্রাসভিত্তিক একটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই লেনদেনের বিষয়ে সন্দিগ্ধ হওয়ার পর বিষয়টি ধরা পড়ে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান।

নিউ ইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ইউএস অ্যাটর্নি প্রিট ভারারা এবং এফবিআইয়ের নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিসের সহকারী ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডিয়েগো রড্রিগেজ শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওই কোম্পানির অর্থ চুরির অভিপ্রায়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কোম্পানির সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের (ভেন্ডর) নামে ভুয়া ইমেইল খোলে।

২০১৫ সালের অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের কয়েক সপ্তাহে ভেন্ডরের কর্মীদের ব্যবহৃত ইমেইল অ্যাড্রেস সদৃশ ইমেইল চালু করে। এরপর এর মাধ্যমে ওই কোম্পানিকে অর্থ লেনদেনের সেবাদাতা ‘প্রফেশনাল সার্ভিস কোম্পানি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে।

ওই কোম্পানির ভেন্ডরদের প্রফেশনাল সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সংরক্ষিত ইমেইল অ্যাকাউন্টে যোগাযোগ করে তারা। এই ইমেইল যোগাযোগের মাধ্যমে ভেন্ডরদের অর্থ পাঠাতে কোম্পানি থেকে ঠিক করে দেওয়া ব্যাংকের পরিবর্তে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠাতে প্রফেশনাল সার্ভিস কোম্পানিকে রাজি করানো হয়।

এরপর ওই কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২১ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১৬টি পেমেন্টের বিপরীতে মোট ৯৮ কোটি ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪৫ ডলার ৮০ সেন্ট (প্রায় ৯৯ মিলিয়ন ডলার) প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউরোব্যাংকের সাইপ্রাসের একটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

এর পরপরই সেখান থেকে অর্থের একাংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরানো হয়।

এই লেনদেনের বিষয়ে সন্দেহ হলে ২৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের পর বাকি অর্থ আটকে দেয় ইউরোব্যাংকের সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ওই অর্থ এরইমধ্যে আমেরিকান কোম্পানিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।

ওই ২৫ মিলিয়ন ডলার এখন সাইপ্রাস, লাটভিয়া, হাঙ্গেরি, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্লোভাকিয়া ও হংকংসহ বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০টি অ্যাকাউন্টে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের আবেদনে এরইমধ্যে ওই অ্যাকান্টগুলো জব্দ করা হয়েছে।

ইউএস অ্যাটর্নি ভারারা বলেন, “ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের গোচরে আসামাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও সাইপ্রাসের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় ইউরোব্যাংক কর্মকর্তারা চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে ৭৪ মিলিয়ন ডলার মার্কিন কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। মার্কিন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ওইসব দেশের ২০টি অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে অর্থাৎ কেউ অর্থ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না।”

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.