অভিবাসন নিয়ে ওবামার আদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার

imagesনির্বাচনী কোলাহলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাসরত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঘনিয়ে আসা দুঃসংবাদটি চাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-ঘোষিত অভিবাসনসংক্রান্ত কিছু সংস্কার উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে শুনানি হয়েছে। গত সোমবার এ শুনানিতে প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাহী আদেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এতে দীর্ঘদিন কাগজপত্রহীন অভিবাসী হিসেবে থাকা লোকজনের মধ্যে আবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলমান রাজনৈতিক হালচালের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ওবামার আদেশের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে, তা বলাই যায়।
অভিবাসনের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই কোটি অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন। নানা পথে এ দেশে আসা অনেকে অভিবাসনের কোনো বৈধতা ছাড়াই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। পরিবার নিয়ে অবৈধতার ছায়ায় ঘেরা এসব অভিবাসীকে বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওবামা। নির্বাচনের আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অভিবাসন নীতির সংস্কার করবেন। ভেঙে পড়া অভিবাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবেন। আইন প্রণয়ন করে অবৈধদের বৈধ করতে ওবামা কংগ্রেসকে বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির মারপ্যাঁচের বলি হয়েছেন অবৈধ অভিবাসীরা। দ্বিতীয় দফা ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসেও কংগ্রেসকে দিয়ে আইন পাস করাতে ব্যর্থ হন ওবামা। এমনকি নিজ দলকেও এ সমস্যা সমাধানে একমতে নিয়ে আসতে ব্যর্থ তিনি।
অভিবাসী দলগুলোর প্রচণ্ড চাপে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ওবামা নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। নির্বাহী আদেশে অভিবাসনের মতো জাতীয় সমস্যা সমাধানের প্রয়াসকে ক্ষমতার অপব্যবহার বলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ‘ডেফার্ড অ্যাকশন’ নামের নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে বাসরত অবৈধ লোকজন, যাঁদের এখানে জন্ম নেওয়া সন্তান রয়েছে, পরিবার-পরিজন রয়েছে, যাঁরা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের না তাড়িয়ে বৈধতা দেওয়ার প্রশাসনিক নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্বাহী আদেশের ফলে অন্তত ৪০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর বৈধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
অভিবাসনবিরোধী রক্ষণশীলেরা ওবামার এ প্রয়াস ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত ২৬টি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করা হয়। টেক্সাসের নিম্ন আদালতে নির্বাহী আদেশের বৈধতা সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশের সব কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এ মামলার শুনানির সময় বিচারকদের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালতের বিচারকেরা রাজনৈতিকভাবে চরম বিভক্ত। দীর্ঘ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আটজন বিচারকই অংশ নেন। যুক্তিতর্কে বিচারকেরা তাঁদের মনোভাবও স্পষ্ট করেছেন। রক্ষণশীল চারজন বিচারকই মনে করেন কংগ্রেসে আইন প্রণয়ন করে অভিবাসন-সমস্যার সমাধান করার কথা। মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা অবাধ নয়। অন্যদিকে, উদারনৈতিক বিচারকেরা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার সীমারেখা লঙ্ঘন হয়নি বলে মামলার যুক্তিতর্কের আলোচনায় মনোভাব দেখান। উদারনৈতিক চারজন বিচারকই বলেছেন, নির্বাহী আদেশের ফলে বহু অভিবাসী পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা পাবে। অবৈধতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে লাখো অভিবাসী। মামলাটির চূড়ান্ত রায় হবে আগামী জুলাই মাসে।
মার্কিন গণমাধ্যম ও আইন বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওবামার অভিবাসন নিয়ে করা নির্বাহী আদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক আদেশ না দেওয়ার ফলে নিম্ন আদালতের স্থগিতাদেশ কার্যকর রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, চূড়ান্ত রায়ে চার-চার বিভক্তির আদেশ আসবে। ফলে নির্বাহী আদেশটি নিয়ে রাজ্য সরকারগুলোর আপত্তির নিষ্পত্তি হবে না। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশের কারণে অভিবাসন নিয়ে নির্বাহী পদক্ষেপের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
মনে করা হচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের খালি হওয়া পদে নতুন বিচারক নিযুক্ত হওয়ার ওপরই নির্ভর করছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের ভাগ্য।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.