এভিয়েশন নিউজ: ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। অভ্যন্তরীণ রুটের উপযোগী দুটি টার্বো-প্রপেলার উড়োজাহাজ সংগ্রহে সর্বশেষ আহ্বান করা দরপত্রে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়ায় এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিমান পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় বিষয়টি অনুমোদন হলে এক মাসের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট শুরু করতে পারবে সংস্থাটি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটের উপযোগী জ্বালানিসাশ্রয়ী দুটি উড়োজাহাজ সংগ্রহ করতে এর আগে সপ্তম দফায় দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি। দরপত্রে ৪৫ থেকে ৮০ আসনের দুটি টার্বো-প্রপেলার উড়োজাহাজ পাঁচ বছর মেয়াদে ড্রাই লিজ অথবা লিজ-পারচেজে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। উড়োজাহাজ দুটি দিয়ে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফ্লাইট শুরু করার কথাও দরপত্রে বলা হয়েছে।
এছাড়া উড়োজাহাজ দুটির বয়স অবশ্যই ১০ বছরের নিচে হতে হবে এবং এর নকশা, ইঞ্জিন ও প্রপেলার অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) অথবা ইউরোপিয়ান এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি (ইএএসএ) সার্টিফায়েড হতে হবে বলে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, সর্বশেষ দরপত্রে কয়েকটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় প্রস্তাবগুলো তোলা হবে। পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিলেই দ্রুততম সময়ে উড়োজাহাজ সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে, সংসদীয় কমিটির বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই অভ্যন্তরীণ রুটে পুনরায় ফ্লাইট শুরু সম্ভব হবে।
এর আগে ২৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বিমানকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করতে বলেন কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। সে হিসাবে ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু করার কথা।
উল্ল্যেখ্য, আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটের বাজার ক্রমেই বাড়ছে। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো এ খাতে উল্লেখযোগ্য যাত্রী পরিবহন করছে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন করছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২০১৩ সালে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯ জন। ২০১২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১০৮, ২০১১ সালে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০, ২০১০ সালে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৩৩ ও ২০০৯ সালে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৭। এসব যাত্রীর বেশির ভাগই পরিবহন হয় বেসরকারি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ রুট চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিমান পরিচালনা পর্ষদ ছোট আকৃতির দুটি নতুন উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্তও নেয়। পরবর্তীতে অর্থসংকটের কারণে কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কম জ্বালানি খরচের ৫০ আসনের দুটি টার্বো-প্রপেলারভিত্তিক উড়োজাহাজ পাঁচ বছর মেয়াদে ইজারা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
উড়োজাহাজ সংকট ও ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৭ সালের বিভিন্ন সময়ে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটের মধ্যে চারটিই বন্ধ করে দেয় বিমান। বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা-যশোর রুটে সপ্তাহে পাঁচটি, ঢাকা-বরিশাল রুটে দুটি ও ঢাকা-রাজশাহী-সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট চালু ছিল। পরে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটের সংযোগ ফ্লাইট হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।