বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে এভিয়েশন শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এভিয়েশন খাত আগের অবস্থায় ফিরতে কত সময় লাগবে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে নানা বিশ্লেষণ।
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের মাঝে এ নিয়ে একটি জরিপ চালায় ইনমারসাত এভিয়েশন ও এয়ারলাইন প্যাসেঞ্জার এক্সপেরিয়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাপেক্স)।
তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, বর্তমান এ সংকট উত্তোরণে ১৮ মাস থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞরা0 বলছেন, কোভিড-১৯ এর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। খবর ফোর্বসের।
চলতি বছরের এপ্রিলের শেষে ফ্লাইট প্লান নামে একটি ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়, যেখানে বিশ্বের ৫০ জনের বেশি এভিয়েশন ও এয়ারলাইন বিশেষজ্ঞ এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। এ অনুষ্ঠানে এই মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এভিয়েশন ও এয়ারলাইন কোম্পানি কিভাবে আরও ডিজিটাল করা যায়, কোভিড-১৯ রোধে কিভাবে টাচলেস প্রযুক্তি কাজে লাগানো যায় সেসব বিষয়েও আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানের একটি অংশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিমান চলাচল ও প্রকৌশল শিল্পকে কিভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে ৫৩৭ জন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে একটা ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। সেই পর্যবেক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফোবর্সের খবর।
ওই পর্যবেক্ষণে কিছু প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হয়। বিশ্বের এয়ারলাইন শিল্প ২০১৯ সালের মতো রাজস্ব স্তরে ফিরে যেতে কত সময় লাগবে? এ প্রশ্নের জবাবে ৭% বিশেষজ্ঞ বলেন, ৬ থেকে ১২ মাস সময় লাগবে, ১৯% মনে করেন ১২ থেকে ১৮ মাস, ৪৪% মনে করেন ১৮ মাস থেকে ৩ বছর লেগে যেতে পারে। ১৬ ভাগ বিশেষজ্ঞের জবাব ছিল তিন বছর লেগে যাবে। ১৪ ভাগ বিশেষজ্ঞ বলেন তিন বছরের বেশি সময় লাগবে। একভাগ বিশেষজ্ঞ কোনো মন্তব্য করেননি।
মহামারীতে এয়ারলাইন শিল্প কতটুকু প্রস্তুত ছিল এমন প্রশ্নে জবাবে ৪৬ ভাগ বিশেষজ্ঞ বলেন দূর্বল প্রস্তুতি ছিল। দীর্ঘ সময়ের এই মহামারীর জন্য কোনো প্রস্তুতিই ছিল না বলে জানান ৪১ ভাগ বিশেষজ্ঞ। অল্প প্রস্তুতি ছিল বলে মনে করেন ১২ ভাগ, এক শতাংশ বিশেষজ্ঞের দাবি মহামারীতে ভাল প্রস্তুতি ছিল এয়ারলাইন শিল্পে। এক ভাগ বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
মহামারী সংকটে এয়ারলাইন শিল্প কি টিকবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৯ ভাগ বিশেষজ্ঞ জানান, টিকবে কিন্তু মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। অবশ্যই টিকে থাকবে বলে জানান ২০ ভাগ বিশেষজ্ঞ। সাত ভাগ বলেন এভিয়েশনে কোভিডের কাটিয়ে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। চার ভাগ বলেন স্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হবে এভিয়েশন শিল্প।
বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার এ শিল্প রক্ষায় এগিয়ে আসবে কি-না এমন প্রশ্নে জবাবে ৪০ ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এগিয়ে আসবে কিন্তু সেটা কিছু মার্কেট ও অঞ্চলের জন্য কার্যকর হবে। ৩৬ ভাগ জানান সহায়তা আসবে কিন্তু তা পর্যাপ্ত হবে না। মোটেই না এমন জবাব দেন ১৩ ভাগ এবং অবশ্যই এগিয়ে আসবে বলে জানান ৭ ভাগ বিশেষজ্ঞ। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি ৫ ভাগ বিশেষজ্ঞ।
এভিয়েশন শিল্পের কোন খাত আগের অবস্থায় দ্রুত ফিরে আসবে – এ ব্যাপারে ৮৫ ভাগ বিশেষজ্ঞ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ডমেস্টিক ট্রাভেল দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। ১৫ ভাগ বলেন আন্তর্জাতিক ট্রাভেল দ্রুত স্বাভাবিক হবে। ৬৯ ভাগ বলেন বাণিজ্যি ট্রাভেল দ্রুত ফিরবে এবং ৩১ ভাগ বলেন অবসর ট্রাভেলের কথা। পয়েন্ট টু পয়েন্ট রুটে ট্রাভেল দ্রুত ফিরবে বলে মনে করেন ৭০ ভাগ বিশেষজ্ঞ। ৩০ ভাগ মনে মনে করেন ২০০ থেকে ৩০০ মাইল দূরত্বের ভ্রমণ দ্রুত উদ্ধার পাবে। ৫৫ ভাগ বলেন অল্প খরচের আর ৪৫ ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইট সেবা দ্রুতই ফিরবে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক ক্যারিন বলছেন, প্রাথমিকভাবে অবসর কাটানোর জন্য ফ্লাইটগুলো ফিরতে পারে। বিশেষ করে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতেই ফ্লাইটগুলো আগের অবস্থায় ফিরবে। বিভিন্ন দেশ অবসরমূলক ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। যেখানেই ভাইরাসের উপস্থিতি থাকবে সেখানেই ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক বিবেচনা করেই মূলত ভ্রমণকারীরা বিমানে চড়বে।
ক্যারিন বলছেন, বাণিজ্যিক মিটিংগুলো অনলাইনে শুরু হয়েছে। এটা আরও সহজ হলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের সংখ্যা কমে যাবে। তবে তিনি মনে করেন, ব্যবসার ক্ষেত্রে ফেস টু ফেস মিটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য বাণিজ্যিক ফ্লাইট ফিরতে পারে আগের অবস্থায়।
অ্যাপেক্সের সিইও জো লিডার বলছেন, বিমান ভ্রমণ আগের মতো নিরাপদ করা গেলেই তবে ফ্লাইট দ্রুত চালু হবে। অধিকাংশ মানুষ বিমান ভ্রমণে আগের মতো স্বস্তি পাবে না।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বিমান ভ্রমণ নিরাপদ ও শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে। তারা বিমানভ্রমণে নিরাপত্তার দিক সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।
সূত্র: ফোর্বস