ঐতিহ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। একটা দল ইউরোপের সবচেয়ে কুলীন ক্লাব টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সফল, অন্য দলের ইউরোপ-সেরার লড়াইয়ে পদচারণই মাত্র কয়েক বছরের! আরও নির্দিষ্ট করে বললে রিয়াল মাদ্রিদ যেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগে রেকর্ড ১০ বারের চ্যাম্পিয়ন, ম্যানচেস্টার সিটি সেখানে সেমিফাইনালই খেলছে এই প্রথম। শুধু এই ইতিহাস আর পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আজ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে কোন দলটা ফেবারিট, তা নিয়ে মনে হয় না কারও খুব বেশি সন্দেহ থাকে।
কিন্তু ইতিহাস ও ঐতিহ্যই তো সব নয়। নির্দিষ্ট দিনে কিংবা নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টে একটা দলের পারফরম্যান্স ও ফর্ম বদলে দিতে পারে অনেক হিসাব-নিকাশ। চোখের সামনে প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে লেস্টার সিটির চেয়ে ভালো উদাহরণ আর নেই। রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়েরাও সত্যটা জানেন। আরে জানেন বলেই ম্যানচেস্টারগামী বিমানে ওঠার আগে গ্যারেথ বেল বলে দিলেন, ‘এ রকম বড় ম্যাচে আসলে কোনো দলই ফেবারিট থাকে না। জয়ের জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং সত্যিই ভালো খেলতে হবে।’
একই সুর সিটির ডিফেন্ডার পাবলো জাবালেতার কণ্ঠেও। তিনি বরং রিয়ালকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়ার একটা ভালো দিকও দেখছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ এমন একটা দল যারা আক্রমণ করতে পছন্দ করে, ফলে প্রতিপক্ষও অনেক জায়গা পায়। আমরাও আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করি। এ কারণে অনেক উন্মুক্ত খেলা হবে এবং অনেক সুযোগ আসবে।’
আক্রমণ আর রিয়াল—দুটি শব্দ যখন একই সঙ্গে বলা হয়, সবার আগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নামটাই আসে। চোটের কারণে রায়ো ভায়েকানোর বিপক্ষে লিগে সর্বশেষ ম্যাচটা খেলতে পারেননি। রোনালদোর খেলার প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কোচ জিনেদিন জিদান তাঁকে মাঠে নামাননি আসলে সিটির বিপক্ষে এই ম্যাচটায় যাতে তাঁকে পুরো ফিট পাওয়া যায়। বিশ্রাম পেয়ে রোনালদোও নিশ্চয়ই ফুরফুরে। আর এটাই হতে পারে সিটির দুশ্চিন্তার বড় কারণ।
সিটি কোচ পেলেগ্রিনি অবশ্য এতটা চিন্তিত নন। রিয়ালের কোচ থাকার সময় রোনালদোকে খেলোয়াড় হিসেবে কাছ থেকে দেখেছেন। এর আগে ভিয়ারিয়ালের কোচ হিসেবে দেখেছেন প্রতিপক্ষ হিসেবে। পেলেগ্রিনি তাই পর্তুগিজ উইঙ্গারকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন নন, ‘আমি ভিয়ারিয়ালের কোচ থাকার সময় থেকেই ওকে চিনি, সে তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগে চারবার ওদের মুখোমুখি হয়েছি, সবগুলো ম্যাচই গোলশূন্য ড্র হয়েছে। তার মানে রক্ষণের দিক থেকে আমরা ভালোই করেছি।’
সিটির দুশ্চিন্তা যদি রোনালদো হন, রিয়ালেরও কিন্তু একজনকে নিয়ে এমন দুশ্চিন্তায় থাকার কথা—সার্জিও আগুয়েরো। কয়েক দিন আগেই লিগে চেলসির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন, নিউক্যাসলের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই আরও এক গোল করে প্রিমিয়ার লিগে ১০০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সিটির স্ট্রাইকার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে নিয়ে আজ যে রিয়ালের বাড়তি পরিকল্পনা থাকবে সেটি জানা কথাই। রিয়াল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানেই সেটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘অসাধারণ খেলোয়াড় সে। ওর দিকে বাড়তি মনোযোগ থাকবে আমাদের।’
আগুয়েরো কি পারবেন কড়া পাহারা গলেও নায়ক হয়ে উঠতে? নাকি আলোটা কেড়ে নেবেন রোনালদো? অথবা এ দুজনের কেউ নন, ইতিহাদে নায়ক হয়ে যাবেন অন্য কেউ? এএফপি, রয়টার্স।
মুখোমুখি সিটি-রিয়াল
এর আগে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দুবার মুখোমুখি হয়েছে সিটি-রিয়াল। দুবারই ২০১২-১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে। প্রথম লেগে রিয়াল জিতেছিল ৩-২ গোলে, ১-১ ড্র হয়েছিল ফিরতি লেগ।
১ নভেম্বর ২০১২ সিটি ১-১ রিয়াল
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ রিয়াল ৩-২ সিটি
আরও খবর