বিমানবন্দরে যাত্রী দুর্ভোগ শিগগির কাটছে না

shahjalal-international-airportএভিয়েশন নিউজ: যাত্রী দুর্ভোগ দূর করতে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থাপনার কাজ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এ দায়িত্ব একাই পালন করতে হচ্ছে দেশীয় সংস্থাটিকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিমানবন্দরে সেবার মান ও যাত্রী হয়রানি নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো একাধিক প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে। এসব বিবেচনায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বিমান।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএম মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, বাংলাদেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনায় বিদেশী অংশীদার নিয়োগে কাজ চলছে। শিগগিরই বিদেশী গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্টদের কাছে দরপত্র বা রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) চাওয়া হবে।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে বিমান কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় ৫ ঘণ্টা অচল থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিকল্প গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না রেখে তার সঙ্গে অন্য কাউকে যুক্ত করা দরকার। এর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তিও দেখানো হয়। এছাড়া বিমানের মতো শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরো দায়িত্ব থাকলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, চিঠিতে তা উল্লেখ করা হয়।

তবে বিমানকর্মীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে সে পরিকল্পনা থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০০৬ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার ওপর বিমানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।

জানা গেছে, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজের মধ্যে বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, কার্গো লোড-আনলোড ও এয়ারক্রাফট সার্ভিসসহ বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বেও রয়েছে বিমান।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন দেশীয় চারটি বিমান সংস্থার প্রায় ৫০টি ছাড়াও ১৮টি দেশের ২৫টি বিমান সংস্থার প্রায় ১০০ উড়োজাহাজ ওঠানামা করে। তবে বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিম্নমানের বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর বেল্টের মাধ্যমে যাত্রীর কাছে লাগেজ আসতে অনেক সময় ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক যাত্রীর লাগেজ পাওয়া যায় না।

বেশির ভাগ সময় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকেন না। ফলে যাত্রী হয়রানির পাশাপাশি বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। এ কারণে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ লোকবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতায় বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো দীর্ঘদিন একাধিক প্রতিষ্ঠানকে হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে।

প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করে বিমান। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করে সংস্থাটি। এ আয় থেকেই বিমানের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর যাবতীয় বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়।

তবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যদি যৌথ অংশীদারিত্বে হয়, তাহলে যে বিদেশী কোম্পানি কাজ পাবে, তারা সেবার মান বাড়াতে বিনিয়োগ করবে। তারা বিমানের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু বিমান কর্মচারীদের আশঙ্কা, বিমানের আয়ের সবচেয়ে বড় খাত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং হাতছাড়া হয়ে গেলে তাদের অনেককে চাকরি হারাতে হবে।

– মনজুরুল ইসলাম

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.