সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছে সম্রাট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছে সম্রাট। অবৈধভাবে আয় করা ১৯৫ কোটি টাকা হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই দুই দেশে পাচার করেছেন ক্যাসিনো বিরোধী অভিয়ানে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

অর্থ পাচারের এই কাজে তাকে সহায়তা করেছেন এনামুল হক আরমান। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে আসার পর দুজনকে আসামি করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি।

সিআইডির অনুসন্ধান বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চাঁদাবাজিসহ অবৈধ বিভিন্ন উপায়ে বিপুল অর্থ আয় করেন সম্রাট। বিপুল এই অর্থের মধ্যে দুই দেশে পাচার করেছেন ১৯৫ কোটি টাকা। হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এনামুল হক আরমানের সহযোগিতায় তিনি এই অর্থ বিদেশে পাচার করেন

সম্রাটের বিদেশ ভ্রমণের তথ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তদন্ত সংস্থাটি। তাদের হিসেব অনুযায়ী, সম্রাট ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৩৫ বার সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। এরবাহিরে ৩ বার মালয়েশিয়া, ২ বার দুবাই এবং ১ বার হংকং গিয়েছেন।

সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন জুয়াড়িরা। কিন্তু সেখানেও সম্রাট ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত। প্রথম সারির জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার বিশেষ ব্যবস্থাও আছে।

এয়ারপোর্ট থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিলাসবহুল গাড়ি ‘লিমুজিন’যোগে। সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গেলে সম্রাটের নিয়মিত সঙ্গী হন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ কমিশনার, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম।

সম্রাটের পাশাপাশি এনামুল হক আরমানের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সিআইডির। তারা বলছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এনামুল হক আরমান ২৩ বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছেন। তবে তার পাসপোর্ট মালয়েশিয়া এবং দুবাই ভ্রমণের কোনো ভিসা নেই।

সম্রাট ও এনামুল হক আরমানের বিষয়ে অনুসন্ধানটি করেছেন সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইমের উপ-পরিদর্শক মো. রাশেদুর রহমান। তিনি জানান, অনুসন্ধানে সম্রাটের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। পাঁচ বছরে তিনি বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় এই অর্থ আয় করেছেন।

সিআইডির এএসপি (মিডিয়া) মো. জিসনুল হক  বলেন, অবৈধ ভাবে অর্থ উপাড়জন এবং তা বিদেশের পাচার করেছেন সম্রাট। এ ঘটনার তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়েছ।

সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপরই ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।

সম্রাটের বড় ভাই বাদল চৌধুরী ঢাকায় তার ক্যাসিনো ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। ছোট ভাই রাশেদ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর সম্রাটের পরিবারের সবাই গা ঢাকা দেন।

এর আগে, গত বছরের ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরে তাদেরকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতি মাসে ঢাকার বাইরেও যেতেন জুয়া খেলতে।

সুত্র -বণিক বার্তা

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.