ভাগ্য বদলাচ্ছে না বিমানের

এয়ারলাইন্স ডেস্ক : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে কোম্পানি আইনের অধীনে পরিচালনা করা হবে। তবে পরিচালনা পর্ষদ অবলুপ্ত ও পুনর্গঠনের এখতিয়ার সরকারের হাতেই থাকবে। এছাড়া সরকার বিমানে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে। এসব হস্তক্ষেপের বিধান রেখে  বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন (রহিতকরণ) আইন, ২০২০ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য  সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বেঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা সচিবালয় থেকে এতে যোগ দেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার কারণে বিদ্যমান বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন অধ্যাদেশ ১৯৭৭ এর আর প্রয়োজন নেই। নতুন বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন (রহিতকরণ) আইন-২০২০ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০০৭ সালের ২৩ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমান একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড নামে যাত্রা শুরু করে।

কোম্পানি আইন অনুসারে বিমানের স্বাধীনভাবে পরিচালন এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ ফোরাম হচ্ছে এজিএম। সেখানেই শেয়ারহোল্ডাররা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিমানের সব শেয়ারের মালিক সরকার। নানা অজুহাতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলেও বিমানের শেয়ার উন্মুক্ত করা হচ্ছে না।

এতদিন বিমান পরিচালিত হয়েছে ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী। কিন্তু উচ্চ আদালত সামরিক শাসনামলে জারি করা সব অর্ডিন্যান্স, বিধি ও প্রবিধিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু ১৯১৩ সালে বিমানসহ আরও কয়েকটি অধ্যাদেশকে কার্যকর রাখা হয়। ২০০৭ সাল থেকে বিমান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। তাই করপোরেশনের কার্যকারিতা লোপ পেয়েছে। এই অবস্থায় ‘বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৭’ রহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, বিমান কোম্পানি আইন অনুযায়ী চলবে। ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্সের কার্যকারিতা না থাকায় তা রহিত করার জন্য মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করার পর থেকেই ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিমান পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ার পরও কোম্পানি আইন অনুযায়ী চলবে কি না তা নিয়ে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। একপর্যায়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ও দুই দফায় দুই ধরনের মতামত দেয়। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্স বিলুপ্ত করে কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালনার।

বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন (রহিতকরণ) আইনের খসড়া অনুযায়ী কোম্পানি আইনে যাই থাকুক না কেন সরকার দক্ষ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। পরিচালনা পর্ষদ অবলুপ্ত করতে পারবে। ব্যবস্থাপনা চুক্তির অবসান করতে পারবে, যেকোনো চুক্তি বা দলিল পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারবে। অর্ডিন্যান্সের অধীনে যেসব কাজ হয়েছে তা এমনভাবে বহাল বা চলমান থাকবে যেন তা রহিত হয়নি। করপোরেশনের সময় দেওয়া লাইসেন্স, চুক্তি, নিবন্ধন, অনুমোদন, অনুদান বা ক্ষমতা অর্পণ যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন তা বিমান প্রদত্ত বলে বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশ বিমান করপোরেশনের পরিবর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি সৃষ্টির জন্য ২০০৭ সালে ১৯৭৭ সালের অর্ডিন্যান্সে ২৮এ ধারা সংযোজন করা হয়। এই ২৮এ ধারায় বর্ণিত ক্ষমতা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন বাতিল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর হয়।

বিমানের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিমান পরিচালনা পর্ষদ। প্রতি বছর এ পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। বর্তমান পর্ষদের সভাপতি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান। পর্ষদে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সংখ্যাই বেশি। পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) খোরশেদ আলম, অ্যাসিটেন্ট চিফ অব এয়ার স্টাফ এয়ার ভাইস মার্শাল এম আবুল বাশার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েকুজ্জামান, বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের এমডি নূর ই খোদা আবদুল মোবিন এবং বিমানের সিইও এম মোকাব্বির হোসেন।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিমান। তিন মাস পুরোপুরি বন্ধ থাকার পর বিমান চলাচল স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না বিমান। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিভিন্ন হারে তাদের কর্মীদের বেতন কমিয়েছে। করোনার সময় বাংলাদেশ বিমানের ১ হাজার ৭শ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে বিমানের ক্যাপাসিটি লস ছিল ২৬ শতাংশ। যা মার্চের শেষে এসে দাঁড়িয়েছিল ৭৬ শতাংশ। মার্চের শেষে সব কমার্শিয়াল অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়। জুন পর্যন্ত অত্যন্ত সীমিত আকারে শুধু চার্টার্ড ও কার্গো ফ্লাইট চালায় বিমান। সম্প্রতি সীমিত আকারে কমার্শিয়াল ফ্লাইট শুরু হয়েছে। যেখানে বিশ্বের ১৭টি গন্তব্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করত বাংলাদেশ বিমান সেখানে এখন মাত্র ৩টি গন্তব্যে ফ্লাইট চালু আছে।

আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে  স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) আইন, ২০২০’ এর খসড়ার সংশোধনী নীতিগত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালার খসড়াও রয়েছে এজেন্ডাতে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির খসড়া উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকের তালিকায়  ফ্রেমওয়ার্ক এগিমেন্ট অন ফেসিলিটেশন অব ক্রস বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক’ রয়েছে। প্রতি বছর ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং দিবসটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জারি করা পরিপত্রের ক ক্রমিকে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়টিও রয়েছে এজেন্ডাতে।

সুত্র-দেশ রূপান্তর

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.