২০১৯ সালে শাহজালাল বিমানবন্দর অচল হয়ে যাবে!

Shahjalal-Airportএভিয়েশন নিউজ: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আর মাত্র চার বছর সচল রাখা সম্ভব। তারপর বিপর্যয় অনিবার্য। এখানে যাত্রী দাঁড়ানোরও সুযোগ থাকবে না। যে হারে যাত্রী বাড়ছে, তাতে ২০১৯ সালে সেটা দাঁড়াবে প্রায় ৮৫ লাখে। বছরে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দিতে সক্ষম এই বিমানবন্দর। বছরে ৬৫ লাখ যাত্রী এখনই পিক আওয়ারে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাঁচ বছরের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল ও সেকেন্ড রানওয়ে নির্মাণ করা না গেলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিভিল এ্য্রাভিয়েশন। এয়ার কমোডর এম শফিকুল আলম বলেছেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করলেও সেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে বড়জোর পনেরো বছর। অর্থাৎ ঠিক আজকেই যদি থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করা হয়, সেটা শেষ হতে লেগে যাবে ’১৮ সাল।

তারপর কী হবে? সেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে ’৩৫ সাল পর্যন্ত। যখন যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে দেড় কোটি, তখন কিভাবে এসব যাত্রী মোকাবেলা করা হবে? তখন তো থার্ড টার্মিনাল দিয়েও সামাল দেখা যাবে না। সেক্ষেত্রে নতুন করে একটা বিশাল বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে। যা করতে সময় লাগবে, কমপক্ষে দশ থেকে বারো বছর। এ বাস্তবতায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণের। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প নিয়ে ঢিলেমি করার কোন অবকাশ নেই। যে কোন মূল্যে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট নির্মাণের।

সিভিল এ্যাভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, এশীয় প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে বিমান যাত্রী বৃদ্ধির শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। সারাবিশ্বে বতর্মানে এক বছরে যাত্রী বাড়ছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ হারে। এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলে এ হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। তার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সবার শীর্ষে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার হয় বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ। এ সব যাত্রী সামাল দিতে গিয়েই পিক আওয়ারে প্রচ- হিমশিম খেতে হয়। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে কনভেয়বেল্ট পর্যন্ত বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বাইরের ক্যানপি থেকে পার্কিং কাউন্টার প্রতিটি পয়েন্টে অস্বাভাবিক ভিড় দেখা দেয়। যাত্রী দর্শনার্থীদের সেবা দূরের কথা, অসহনীয় পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এক সঙ্গে ৬/৭টা ফ্লাইট নামলেই পরিস্থিতি সামাল দেয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। তখন যে চিত্র চোখে পড়ে, তাতে এটাকে সচল বিমানবন্দর বলার উপায় থাকে না।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রী বৃদ্ধির চলমান ধারা দিন দিন আরও বাড়বে। তাতে দেখা যাবে আর তিন বছর পরেই শাহজালালের বার্ষিক ক্যাপাসিটি ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। সিভিল এ্যাভিয়েশনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, যখন কম ফ্লাইট থাকে, তখন মনে হয় বিমানবন্দর সুনসান, ছিমছাম, নির্ঝঞ্ঝাট ও ঝামেলামুক্ত। কিন্তু যখন এক সঙ্গে ছয়টার বেশি ফ্লাইট একত্রে নামে তখন ইমিগ্রেশনের কাজ সারতেই লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। লাইনেও দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। ইমিগ্রেশন থেকে কনভেয়বেল্ট হয়ে কাস্টমস পার হতেই গলদঘর্ম যাত্রী সাধারণ। এমনই পরিস্থিতির শিকার যাত্রী হারুন চৌধুরী বলেন, এখনই এ অবস্থা। দু এক বছর পর তো অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।

সরেজমিনে প্রতিদিন শাহজালালের যে চিত্র চোখে পড়ে, তাতে দেখা যায়, ক্রমশ সীমিত হয়ে আসছে প্রয়োজনীয় যাত্রীসেবা। বিমানবন্দরের যাত্রী সেবা নিয়ে হরহামেশাই অভিযোগ ও প্রশ্ন থাকলেও সিভিল এ্যাভিয়েশন বলছে, বছরে বড়জোর ২৫ লাখ যাত্রীর কথা বিবেচনায় রেখে আশির দশকের শুরুতে তৎকালীন জিয়া বিমানবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। পরে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দু’ হাজার সালের দিকে আরেক দফা নির্মাণ করা হয় সেকেন্ড টার্মিনাল। গত এক দশকে সে যাত্রী সংখ্যা আজ দাঁড়িয়েছে ষাট লাখের ওপর। আগামী চার বছরে দাঁড়াবে কোটির ওপর। তখন পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। সেটা অনুধাবন করেই সিভিল এ্যাভিয়েশন উদ্যোগ নেয় থার্ড টার্মিনাল তৈরির।

বিগত মহাজোট সরকারের আমলের বিমানমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনা উপস্থাপনের পর নেয়া হয় থার্ড টার্মিনালের উদ্যোগ। গত জুলাইয়ে একটি বিদেশী কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের সিপিজে, কোরিয়ার উসিন ও দেশের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিডিসি যৌথভাবে এই পরামর্শকের কাজের কার্যাদেশ পায়। এখন চলছে সমীক্ষার কাজ। মার্চের আগেই সমীক্ষার কাজ শেষ হচ্ছে বলে আশাবাদী সিভিল এভিয়েশন।

সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী বলেছেন, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়ার যৌথ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ দশটি বিমানবন্দরের ডিজাইন তৈরির অভিজ্ঞতা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট ও কোরিয়ার ইনচিওন এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টের ডিজাইন করে এই কোম্পানি ইতোমধ্যে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। সে বিবেচনায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয় গত জুলাইয়ে। ইতোমধ্যেই তারা কাজ শুরু করেছে। থার্ড টার্মিনাল কোন জায়গায় কোন্ নক্সায় নির্মাণ উপযোগী হবে সেটাই সমীক্ষার মূল লক্ষ্য। তাদের এক বছরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও আগামী মার্চেই তারা চূড়ান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে সক্ষম হবে। তারপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এটা নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে, নাকি পিপিপি মডেলে হবে। সেটা ঠিক করার পর মূল কাজের দরপত্র ডাকা হবে।

আশা করা যাচ্ছে আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দরপত্র আহ্বানের কাজ শেষ কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হবে। তারপর মূল কাজ শুরু করলে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সেটা সম্পন্ন সম্ভব। এ বিষয়ে এয়ার কমোডর শফিকুল আলম বলেন, সরকার আন্তরিক হলে থার্ড টার্মিনাল চার বছরে নির্মাণ সম্ভব। তখন সেটা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। তারপর যত যাত্রী বাড়বে সেটা আর থার্ড টার্মিনাল দিয়েও সামাল দেয়া যাবে না। সে বাস্তবতায় উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে নতুন একটি এয়ারপোর্টের কোন বিকল্প নেই। নতুন একটি এয়ারপর্োাট অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় করতে গেলেও কমপক্ষে দশ বছর লাগবে। আরও বেশিও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে? এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে। জোর গুরুত্ব দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় বিপর্যয় সামাল দেয়া দেয়া যাবে না।

অগ্রগতি কতদূর?
সাবেক বিমানমন্ত্রী কর্নেল ফারুক খান শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল ও সেকেন্ড রানওয়ে নির্মাণের জোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন আদায় করেন। শাহজালাল বিমানবন্দরে ডেনিস প্রজেক্টের শুভ উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে এ সংক্রান্ত রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। তারপর বেশ ক্ষিপ্রগতিতে সিভিল এ্যাভিয়েশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদ হোসেন প্রকল্পের একটি রূপরেখাও প্রস্তুত করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত জুলাইয়ে থার্ড টার্মিনাল ও সেকেন্ড রানওয়ের নির্মাণের সমীক্ষা চালানোর জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়।

সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী জনকণ্ঠকে বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে বর্তমানের ভিভিআইপি টার্মিনাল থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকের হেলিপ্যাড টার্মিনাল পর্যন্ত সুবিস্তুৃত জায়গা বাছাই করা হয়েছে। এ জন্য হেলিকপ্টার টার্মিনাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নোটিস দেয়া হয়েছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ শুরুর আগেই সেসব স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হবে। স্থানান্তর করা হবে চার দশকের পুরনো ফ্লাইং ক্লাবও। সেকেন্ড রানওয়েটাও ওই সীমানা বরাবর বর্তমান রানওয়ের দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হবে।

কেমন হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল?
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনালের রূপরেখা সম্পর্কে গত সপ্তাহে সিভিল এ্যাভিয়েশন সদর দফতরে সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করে পরামর্শক কোম্পানি। নিয়োগের পর এ পর্যন্ত পরামর্শক কোম্পানি কী ধরনের মডেল প্রাধান্য দিচ্ছে, সেটার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়া হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সিভিল এ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল সানাউল হকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেয়া প্রতিনিধিদের সর্বসস্মতিক্রমে যে মডেল পছšদ করা হয়েছে, তার আকৃতি ইংরেজী অক্ষর ই-সদৃশ। সেটা তিন তলাবিশিষ্ট। শাহজালালের সেকেন্ড টার্মিনালের শেষ দক্ষিণপ্রান্ত থেকে শুরু হবে থার্ড টামিনাল। বর্তমানে এখানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। সেটা সরিয়ে নেয়া হবে, উত্তর দিকের ইমপোর্ট কার্গোর স্থানে। আর ইমপোর্ট কার্গো সরিয়ে নেয়া হবে আরও উত্তর দিকে। বর্তমানে ভিভিআইপি টার্মিনালও আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেয়া হবে অথবা বর্তমান স্থানেই থাকতে পারে।

থার্ড টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক স্থাপত্যরীতিতে। এতে থাকছে ৩২ বোর্ডিং ব্রিজ। টার্মিনালের মাঝামাঝি একটি দু’দিকের আন্ডারপাস ও ওভারপাস দিয়ে সংযুক্ত করা হবে আগমন ও বহির্গমন যাত্রীর যাতায়াত। সেটা কোন্্ দিক দিয়ে মূল সড়কের সঙ্গে সংয্ক্তু করা হতে পারে সেটা এখনও স্থির করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে দুটো প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একটা হতে পারে সরাসরি বর্তমান অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে নাক বরাবর পূর্ব দিক দিয়ে বলাকা ভবনের উত্তর পাশের বাগানের ভেতর দিয়ে মূল সড়কে পৌঁছানো। অপরটি হতে পারে সোজা দক্ষিণ দিক দিয়ে পদ্মাঅয়েলের সামনের রাস্তা দিয়ে মূল সড়কে।

কত সময় লাগতে পারে?

থার্ড টার্মিনাল, সেকেন্ড রানওয়ে ও বিকল্প রানওয়ে নির্মাণের জন্য পরামর্শক কোম্পানিকে সময় দেয়া হয়েছে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের। কিন্তু যে গতিতে কাজ চলছে তাতে এ সময়ের আগেই সেটা সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী সুধেন্দু বিকাশ গোস্বামী। তিনি বলেন, পুরো এক বছর সময় নাও লাগতে পারে। আশা করা হচ্ছে আগামী মার্চেই একাধিক মডেলের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। সেগুলো থেকে একটি মডেল বাছাই করবে মন্ত্রণালয় তথা সরকার। মডেল বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কোন্্ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে? সেটা সরকারী অর্থায়নে হবে নাকি পাবলিক প্রাইভেট পার্র্টনারশিপে, সেটা সিদ্ধান্ত নেবেন সরকারপ্রধান। তারপর ডাকা হবে দরপত্র। আর এ কাজটুকু করতেও সময় লাগবে কমপক্ষে ছয়মাস অর্থাৎ সরকার যদি অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে গুরুত্ব বিবেচনা করে তাহলে আগামী বছরের শেষ দিকে মূল কাজের কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব। সেটা সম্ভব হওয়ার পরও এ প্রকল্প শেষ করতে আরও কমপক্ষে তিন বছর অর্থাৎ মোট চার বছর লেগে যাবে।

জানা গেছে, থার্ড টার্মিনালের পাশাপাশি সেকেন্ড রানওয়ে নির্মাণ করা হবে। বর্তমান রানওয়ের দক্ষিণপ্রান্ত থেকে সেটা আরও সম্প্রসারণ করে বেড়িবাঁধের কাছাকাছি গিয়ে শেষ করা হবে। বর্তমান রানওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে সাড়ে দশ হাজার ফুট। সেটা আরও বাড়ানো হবে এক হাজার ফুট। যাতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিসর উড়োজাহাজ এয়ারবাস-৩৮০ ওঠানামা করতে পারে। এয়ার কমোডর শফিকুল আলম বলেছেন, সেকেন্ড রানওয়ে ছাড়াও নির্মাণ করা হবে আরও একটি বিকল্প রানওয়ে। বর্তমান মূল রানওয়ের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে এটা নির্মাণ করা হবে। যাতে কোন দুর্যোগে যদি মূল রানওয়ে অচল হয়ে পড়ে তখন যাতে বিকল্প রানওয়ে ব্যবহার করা যায়। তিনি মনে করেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শাহজালালের বতর্মানের দৈন্য থাকবে না। দৃষ্টিনন্দন একটি এয়ারপোর্ট দেখার সৌভাগ্য হবে দেশী বিদেশী যাত্রীদের। সেটা দিয়ে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান যাত্রী সামাল দেয়া সম্ভব হবে।

কিন্তু তারপর কি? প্রশ্ন করা হলে শফিকুল আলম বলেন, তখন থার্ড টার্মিনাল দিয়েও কাজ হবে না। আবারও দেখা দেবে অত্যধিক যাত্রীর ধকল। ধারণা করা যায় যাত্রী বৃদ্ধি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ৩৫ সালে সেটা দাঁড়াবে কমপক্ষে দেড় কোটিতে। যাত্রীর জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়বে নতুন একটি বিমানবন্দরের। সে ঢাকাতেই হোক কিংবা পদ্মার ওপারে, তা দ্রুত করতেই হবে। করতে হলে পরিকল্পনা নিতে হবে এখনই। কারণ ঠিক এখনই যদি বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্টের কাজও শুরু হয় তাহলেও শেষ করতে সময় লাগবে কমপক্ষে দশ থেকে বারো বছর।

কত যাত্রী বাড়ছে?
বাংলাদেশে গত এক দশকে আকাশ যাত্রী বাড়ছে অবিশ্বাস্য হারে। গত বছর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন ষাট লাখেরও অধিক দেশী-বিদেশী যাত্রী। তার আগের বছর সেটা ছিল লাখ পঞ্চাশেক। আগামী বছর সেটা দাঁড়াবে কমপক্ষে ৭০ লাখে। বিশ বছর পর ২০৩৫ সালে যাত্রী সংখ্যা দাঁড়াবে ( ১৫ মিলিয়ন) দেড় কোটিরও বেশি। তখন থার্ড টার্মিনালও এ যাত্রীর প্রয়োজনীয় সার্ভিস দিতে পারবে না। মূলত এ বাস্তবতার আলোকেই একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প এখনই হাতে নিতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন্স অব ট্রাভেলস এজেন্টসের (আইএটিএ) গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বে যাত্রী বৃদ্ধির শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। যাত্রী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, বিদেশগামী শ্রমিকের উর্ধমুখী অবস্থান। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে আত্মপ্রকাশের দরুন যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু যাত্রী নয়, কার্গোর অবস্থাও একই। প্রতিবছর গড়ে শতকরা ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে বৃদ্বি পাচ্ছে কার্গো পরিবহন। একই হারে বাড়ছে এয়ারক্রাফটের সংখ্যাও। সামগ্রিকভাবে এ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য বাংলাদেশকে বিপুল সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.