প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জন্ম নিল ‘শিশু’ দ্বীপ

১৯৭০ সালের কথা। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ভোলা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল দুই বাংলাকে। আর সেই-সময়ই বঙ্গোপসাগরের বুকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল ছোট্ট একটি দ্বীপ।

‘নিউ মুর’ আইল্যান্ড খ্যাত সেই দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক চলেছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে। তারপর হঠাৎই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এই দ্বীপ। এবার ঠিক এমনই ঘটনা ঘটল প্রশান্ত মহসাগরেও। জন্ম নিল ছোট্ট এক দ্বীপ-শিশু।

দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহসাগরের সেন্ট্রাল টোঙ্গা দ্বীপপুঞ্জের মাঝে গত ১০ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় এই ‘নবজাতক’। এমনটাই দাবি গবেষকদের। যদিও বিষয়টি গবেষকদের নজরে আসে তারও কিছুদিন পরে।

কিন্তু কীভাবে জন্ম নিল এই দ্বীপ? আসলে প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে রয়েছে অশ্বক্ষুরাকৃতি ভূমিকম্প বলয়। যা বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’ নামে।

বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত-প্রবণ অঞ্চল এটিই। ফিজি দ্বীপপুঞ্জের মতো টোঙ্গার অবস্থানও প্রশান্ত মহাসাগরের অগ্নিবলয়ে। গত ১০ সেপ্টেম্বর সেখানে জেগে ওঠে সমুদ্রে নিমজ্জিত এক আগ্নেয়গিরি। শুরু হয় অগ্ন্যুৎপাত।

উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণ করে এই অগ্ন্যুৎপাত সম্পর্কে তৎক্ষণাৎ একটি বিবৃতি জারি করেছিল নাসার আর্থ অবজারভেটরি। তবে আগ্নেয়গিরির ছাই ও ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে যাওয়ায় দ্বীপ জন্ম নেয়ার বিষয়টি তখনও নজরে আসেনি গবেষকদের।

প্রলয় খানিকটা শান্ত হলে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবার নবজাতক দ্বীপটির সাক্ষাৎ পান নাসার গবেষকরা। অবশ্য তখনো পর্যন্ত এই দ্বীপের আয়তন ছিল মাত্র ৪০০০ বর্গকিলোমিটার। ক্রমশ বাড়তে বাড়তে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটার বা আকার ধারণ করে দ্বীপটি।

গবেষকদের মতে, এইধরনের আগ্নেয় দ্বীপ সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। অর্থাৎ, সৃষ্টির কয়েক বছরের মধ্যে তা আবার তলিয়ে যায় সমুদ্রগর্ভে। তার একটা কারণ যেমন সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি, তেমনই আগ্নেয়শিলা ও ছাই-এর স্তূপের ক্ষয়ের কারণেও ক্রমশ কমতে থাকে তাদের উচ্চতা।

তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক দশক পর্যন্ত স্থায়ী হয় এই ধরনের দ্বীপগুলো। টোঙ্গার এই নবজাতক ঠিক কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে তাকে নিয়ে কৌতূহলের অভাব নেই।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলে দিয়েছে টোঙ্গার এই সদ্যজাত দ্বীপ। প্রকৃতির প্রলয় থামলে এই দ্বীপেও অভিযানের হিড়িক পড়ে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো!

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.