বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে হয় ৩ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে। আকুর দেনা বাবদ প্রায় ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেনাও শোধ করা হয়েছে। এর আগে ১ মার্চ রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার।
আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ এখন গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ৬ বছর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করায় এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টের পর থেকে রিজার্ভ কমছে। এর আগে বেড়েছিল। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। তারপরও রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাচ্ছে না। ২০২২ সালে আমদানি ব্যয় সর্বোচ্চ প্রতি মাসে প্রায় ৮৫০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৪২০ কোটি ডলারে নামানো হয়েছে। আমদানি কমার কারণে দেশের শিল্প ও পণ্যমূল্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়েছিল মার্চে রিজার্ভ কমে যাবে। জুনে গিয়ে রিজার্ভ বাড়তে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মনে করা হচ্ছে, জুনের মধ্যে রিজার্ভ বাড়বে। কারণ রোজা ও ঈদের কারণে এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে পারে। এ ধারা আগামী কুরবানির ঈদ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এতে জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রভাবে রিজার্ভ বাড়াবে। তবে আমদানি ব্যয়ও বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে রিজার্ভ কতটুকু বাড়বে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয় এর আগে মাসে ৫০০ কোটি ডলারের ঘরে উঠেছিল। এখন তা ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। গত ২ মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্সও কমেছে।
এদিকে আমদানি ব্যয়ে লাগাম টেনে কিছুটা কমানো হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি আমদানি বেড়েছিল ৪৬ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে সাড়ে ৫ শতাংশ। তবে জানুয়ারিতে কমেছে প্রায় সাড়ে ২৩ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারিতে বেড়েছিল ১৫ শতাংশ।
আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত করার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়-ব্যয়ের চলতি হিসাবে ঘাটতি কিছুটা কমেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এ হিসাবে ঘাটতি হয়েছিল ১ হাজার ২৬ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫০৪ কোটি ডলারে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ আটটি দেশ বাকিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে। প্রতি ২ মাস পরপর আমদানি-রপ্তানির দেনা-পাওনা সমন্বয় করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি করে বলে প্রতি মাসেই দেনা পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে রিজার্ভে চাপ পড়ে। জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি ২ মাসের দেনা বাবদ ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত কিস্তিতে নভেম্বর ও ডিসেম্বর সময়ের জন্য পরিশোধ করা হয়েছিল ১১২ কোটি ডলার। গত কিস্তির চেয়ে এবার ৭ কোটি ডলার আমদানি ব্যয় কমেছে।
আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলংকা আকু থেকে বাদ পড়েছে। আগে শ্রীলংকা এর সদস্য ছিল। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তার নিয়মিত দেনা পরিশোধ করতে না পারায় নিজেদের নাম ওই সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।