শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা খুব স্বল্পকালীন সরকার। আগামী বছরই হয়তো রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার দেখব। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, জানি না কী হবে।’ রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চার দিনব্যাপী বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে তিনি এ কথা বলেন।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে চারদিনের এ সম্মেলনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। এবারের আয়োজনের মূল বিষয় ‘আন্তঃসংযোগ: সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা’। উদ্বোধনী সেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘উন্নত দেশ থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আলোচনা চলমান। অনেক দেশই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।’
অর্থনৈতিক ও আয়বৈষম্য এ মুহূর্তে বড় একটি দুশ্চিন্তার বিষয় উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক বড় বড় কোম্পানির সব টাকা বাইরে চলে গেছে। ব্যাংকের টাকাও বাইরে চলে গেছে। বড় বড় শিল্প গ্রুপের বিশেষ করে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যালান্স শিটে অনেক টাকা দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে তাদের কোনো রিসোর্স নেই, টাকা নেই। কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিকের বেতন আসবে কোথা থেকে?’
অর্থনীতির এমন অবস্থার মধ্যে সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের কথা উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এমন এক পরিস্থিতি, যদি আরো স্কুল-ভার্সিটি বানাতে বলা হয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়াতে বলা হয়, তাহলে কোন খাতে বেশি বরাদ্দ দেব? এটা হয়তো নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনও বলতে পারবেন না।’
সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তৈরি করতে হলে প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা কৃষকদের সংগঠনগুলোও শক্তিশালী করতে হবে বলে মনে করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সারা দেশের চর, জলাধার, হাওর ও বিল প্রভাবশালীরা দখল করে নেয়। যদি কৃষক সংগঠন শক্তিশালী হতো, কাঠামোগত গণতন্ত্র থাকত, প্রান্তিক পর্যায়ে গণতন্ত্র মজবুত হতো তাহলে অনেক লাভ হতো। তাছাড়া বৈষম্য দূর করতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দরকার, যেখান থেকে অনেক দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।’
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে বলছে উত্তরণ না করতে। আবার কেউ বলছে উত্তরণ করে ফেলতে। আসলে ইচ্ছা হলেও এটা আটকানো যাবে না। আমরা দুই দফা মূল্যায়নে উতরে গেছি। তবে সমস্যা থাকলে তা আমরা জাতিসংঘকে বলতে পারি।’ অর্থনৈতিক কূটনীতিতে দেশ অনেক পিছিয়ে আছে মন্তব্য করে এতে নজর দেয়ার তাগিদ দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
এক প্রশ্নের উত্তরে মধ্যম আয়ের ফাঁদ নিয়ে উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া তো দূরের কথা, আমরা এখন থাইল্যান্ডের মতো কীভাবে উন্নতি করতে পারি—সেটাই এখন ভাবার বিষয়। আমাদের থেকে পিছিয়ে থেকে ভিয়েতনাম আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রায় ৪০টি দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, যেখানে আমাদের একটিও নেই এখনো। আমরা এমন অনেক কাজ এখনো শুরুই করিনি।’
এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো উন্মুক্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত এস গিল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ছয় বিলিয়ন মানুষ সময়ের সঙ্গে লড়াই করছে। বাইরের পরিবেশে এ চ্যালেঞ্জগুলো আরো কঠিন করে তুলছে। মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে দেশগুলোকে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিনিয়োগ চীন থেকে নাকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে তা দেখার বিষয় না। তবে বাংলাদেশে জ্বালানিনির্ভরতার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা ২০২৩ সালে দেশে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে ১২৩ দিন।’