নির্ধারিত সময়ে প্রশ্নপত্র না আসায় বিমানের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল
এক পরিচালকের ব্যর্থতায় ক্ষুব্দ পরীক্ষার্থীরা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল অ্যাসিসটেন্ট পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। শনিবার লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুল ও গার্লস কলেজ কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিমানের একজন পরিচালক যথাসময়ে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্দান্ত নেয়। লালমাটিয়া গার্লস হাই স্কুলের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এই তথ্য জানাগেছে।
অপর এক চিঠিতে লালমাটিয়া সরকারি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহানার জামান জানান, প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে না আসার বিষয়ে জানার জন্য বারবার বিমানের সংশ্লিস্ট পরিচালককে এ ব্যপারে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি অধ্যক্ষের কথায় কর্ণপাত করেননি। পরীক্ষা নিতে না পারায় পরীক্ষার্থীরা ওই পরীক্ষা কেন্দ্রেও ব্যাপক হট্টগোল ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই ঘটনায় লালমাটিয়া গার্লস কলেজেরও সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।
এই ঘটনায় আরো কয়েকটি কেন্দ্রেও বিক্ষোভ করেছেন শত শত নিয়োগ পরীক্ষার্থী। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, প্রশ্নপত্রের দায়িত্ব থাকা বিমানের ওই প্রভাবশালী পরিচালকের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনায় পুরো বিমান জুড়ে চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে। বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, সম্প্রতি যোগ দেওয়া বিমানের এই পরিচালকের বিরুদ্ধে কর্মী নিয়োগে মোটা অংকের টাকা নেওয়া, ব্যক্তিগত কাজে বিমানের গাড়ি ব্যবহারের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। তাকে আইটি বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে ওই শাখার দায়িত্ব নিয়েছেন।
খোদ বিমান পরিচালনা পর্যদের এক সদস্যের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি ওই শাখার দায়িত্ব নেন। অথচ এই পরিচালকের বিরুদ্ধে পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্টতার অসংখ্য অভিযোগ আছে। যোগদানের পর তিনি প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার ভাইবা নিতে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
তার বিরুদ্ধে সাবেক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে জনপ্রশাসন পুরস্কার গ্রহন করার অভিযোগ আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাইভেট সেক্রেটারী এনআই খানের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারণে তিনি এই পুরস্কার পান বলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সুত্রে জানাগেছে। এন আই খানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে তার অন্তরঙ্গ ছবিও রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই পরিচালকের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা বঙ্গমাতা ফাউন্ডশেনের প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য দেওয়ারও অভিযোগ আছে। বঙ্গমাতা ফাউন্ডেশনের তিনি অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বলেও জানা গেছে। সম্প্রতি তিনি বিমানের গাড়ি ব্যবহার করে বগুড়া গিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রেনিং কাজে অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে থেকে তিনি মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন। জানাগেছে ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি এর আগে দায়িত্বরত ছিলেন। অথচ ছাত্রজনতার গণআন্দোলনের পর তিনি বঞ্চিত হওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুগ্ম সচিবের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে তদন্তাধীন আছে। মোটা অংকর ঘুষ দিয়ে তিনি বিমানের পরিচালক হওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিস্টদের অভিযোগ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। তবে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বহালতবিয়তে।
সেখানে সংস্কারের বিন্দুমাত্রা ছাপ পড়েনি। বিমানের সার্বিক অবস্থা দেখভালের নেই কেউ। নেই তেমন কোনো জবাবদিহিও। এসব কারণে আওয়ামী সুবিধাভোগীসহ নিশিরাতের ভোটের কুশীলবরা এখনো ছড়ি ঘোরাচ্ছেন সাধারণ কর্মী ও একসময়ের আওয়ামীবিরোধীদের ওপর।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মারা যাওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদটি এখনো শূন্য। ফলে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চলছে ধীরগতি।