প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি : ডিজিটাল প্রমাণ মিলেছে আসামিদের বিরুদ্ধে

pm02প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটির ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ‘ডিজিটাল’ প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ডিজিটাল প্রমাণের মধ্যে রয়েছে ফোনালাপের রেকর্ড ও বিমান মেরামতের দিন সেখানে উপস্থিতির ভিডিও ফুটেজ যা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে বড় দলিল বলে জানিয়েছে সিটিটিসি ইউনিটের এক কর্মকর্তা। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য বিমান থেকে অয়েল প্রেসার সেন্সর খুলে লাগানোর তথ্যও দিয়েছেন আসামিরা। এই মামলায় রিমান্ডে থাকা সাত আসামিকে মুখোমুখি ও এককভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করা দুই আসামির রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানানো হবে আজ।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য এখন বলা যাবে না।
তদন্ত সূত্র জানায়, ২৬ নভেম্বর বিমানটি হ্যাঙ্গারের সামনের ফাঁকা জায়গায় রাখার সময় আসামি সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিক ইঞ্জিনের কাজ করেন। তারা ইঞ্জিনের অয়েল প্রেসার সেন্সর পরিবর্তন করেন। তারা অন্য একটি বিমান থেকে অয়েল প্রেসার সেন্সরটি খুলে এনে সেন্সর লাগানোর বিষয়ে স্বীকার করেছেন, যা নিয়মের মধ্যে পড়ে না। কারণ নিয়ম হচ্ছে নতুন পণ্য এনে রিপ্লেস করা। তারা জেনেশুনেই এই অপরাধ করেছেন বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
জিজ্ঞাসাবাদ টিমে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে নাশকতার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা ডিজিটাল প্রমাণ পেয়েছি। এর মধ্যে তাদের ফোনালাপের রেকর্ড, বিমান মেরামতের সময় সেখানে উপস্থিতির সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট রয়েছে।
তদন্তের স্বার্থে এসবের বিস্তারিত বর্ণনা এখন দেয়া যাবে না উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, পুরো বিমানবন্দর সিসি ক্যামেরার আওতাধীন। ২৬ নভেম্বর হ্যাঙ্গারের বাইরে মেরামতের ফুটেজ থাকলেও হ্যাঙ্গারের ভেতরে কোনো সিসি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি রহস্যজনক। সেখানে সিসি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বিমানের প্রডাকশন শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী এ ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন। দেবেশ দাবি করছেন, তিনি নিজে ওই বিমানে উপস্থিত ছিলেন। অয়েল প্রেসার লাইন বি-নাট ঢিলা হলে বিমান দুর্ঘটনায় পড়বে এটা তিনি জানেন। এরপরও কেন নিজে মরার জন্য সেটা করতে যাবেন।
উল্লেখ্য, ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট যাওয়ার পথে তাকে বহনকারী বিমানের ইঞ্জিনে ত্রুটি ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় ২০ ডিসেম্বর রাতে মামলা হয়। ২১ ডিসেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটকে দেয়া হয়। ২২ ডিসেম্বর সিটিটিসি ইউনিট সাত আসামিকে গ্রেফতার করে সাত দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়। সাত আসামি হলেন- বিমানের প্রডাকশন শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী, পরিদর্শন ও মান নিশ্চিতকরণ শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এসএ সিদ্দিক, এমসিসির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা সামিউল হক, মো. লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও মো. জাকির হোসেন। আর আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন মামলার অপর দুই আসামি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল কর্মকর্তা এসএম রোকনুজ্জামান ও জুনিয়র টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.