অবশেষে বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর হচ্ছে

images cgggজোবায়ের আহম্মেদ অভি: অবশেষে তৈরি হচ্ছে বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর। ১৯৯৬ সালে রামপাল উপজেলায়এ বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। এই দীর্ঘ সময়েও এর কোন বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ তাগিদে এই বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এ বিষয়ক প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে বলেন, বাগেরহাটে খুব দ্রুত দেশের উত্তরাঞ্চলকে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে অর্থনীতি বেগবান করতে চায় সরকার। এজন্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এই বিমানবন্দরটি এগুলোর মধ্যে একটি। তিনি জানান, খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে ব্যয় হবে ৪৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে, যা চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন নাগাদ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বিমানবন্দরটি তৈরির বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাণিজ্য সম্প্রসারণে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে মংলা বন্দর, মংলা ইকোনমিক জোন, ইপিজেড ছাড়াও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এ অঞ্চলে অবস্থিত, যা জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একই সঙ্গে খানজাহান আলী মাজার ও ষাটগম্বুজ মসজিদের জন্য এই এলাকাকে ঘিরে ব্যাপক পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। সেটি শুধু স্থানীয়ভাবেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও আকর্ষণীয়। এজন্য ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পর্যটন শিল্পের প্রসার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী প্রেরণকল্পে এই বিমানবন্দরটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া দেশে যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন ও রফতানি হয় তার ৬০ শতাংশ খুলনার। রফতানিমুখী চিংড়ি শিল্পের বিকাশে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন। বিমানসেবা চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুবন্ধন তৈরি হবে। সূত্র জানায়, ২০১১ সালে খুলনা জেলা সফরের সময় খানজাহান আলী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৪৬৪ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। কিন্তু নানা জটিলতায় এ প্রকল্পটির কাজ আর এগোচ্ছিল না। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছেÑ বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ১৬৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৭২ হাজার ১৭৩ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরটির জন্য রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে ও এপ্রোনের জন্য পেভমেন্ট ওয়ার্ক হবে ২ লাখ ৪ হাজার ১৫৩ বর্গমিটার, অপারেশনাল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ হবে ১৮ হাজার ৫৬৪ বর্গমিটার, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, নেভ এইড এবং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ ও স্থাপন করা হবে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ বলছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষকী পরিকল্পনায় বিমান যোগাযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে খুলনায় কোন বিমানবন্দর নেই। খুলনা থেকে যশোর বিমানবন্দরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, সড়কপথে যা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। প্রস্তাবিত এই বিমানবন্দরটি স্থাপন হলে খুলনা ও মংলা বন্দর থেকে দূরত্ব হবে মাত্র ২০ কিলোমিটার। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ পর্যটন সংখ্যা বাড়ানো ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.