ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৭০০ অভিবাসী উদ্ধার

index huভূমধ্যসাগরের লিবীয় উপকূল থেকে গত শনিবার ও গতকাল রোববার সকাল পযন্ত অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি দেয়া তিন হাজার সাত শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাচারকারীদের নৌযান থেকে ইতালীয় ও ফরাসি বাহিনী তাদের উদ্ধার করে। রোববার দিনভর এই উদ্ধারতৎপরতা অব্যাহত থাকে।
ইতালি কর্তৃপ জানিয়েছে, অবৈধ পথে বিদেশগামীদের উদ্ধারে ইতালি ও ফরাসি নৌবাহিনী অন্তত ১৭টি অভিযান পরিচালনা করেছে। চলতি বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়াকালে অন্তত এক হাজার ৭৫০ মানুষ নিহত হয়েছেন। গত বছরের এই একই সময়ের তুলনায় যা ২০ গুণ। ২০১৪ সালে ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দেয়ার সময় ৯৬ জন নিহত হন।
এ দিকে মিসরের কাছে এক অভিবাসীবাহী নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তাতে তিনজন মারা গেছে এবং ১৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
রোমে ইতালির কর্তৃপ জানিয়েছে, দেশটির কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সেনারা অভিযান চালিয়ে ওই অভিবাসীদর উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধারে ১৩টি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে।
কর্তৃপরে প্রকাশ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মানবপাচারকারীরা লিবিয়া ও সিসিলির মাঝপথ দিয়ে নৌকায় অতিরিক্ত লোক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছে। সেনারা সেখান থেকে লোকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। একই দিন অবৈধ পথে ইউরোপগামীদের ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে জাহাজ পাঠায় ফ্রান্স। ফরাসি সেনারা লিবীয় উপকূল থেকে প্রায় ২২০ বিদেশগামীকে উদ্ধার করে। তাদের ইতালিয় কর্তৃপরে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া বিদেশগামীরা সাব-সাহারা অঞ্চলের বলে ধারণা করা হচ্ছে। আপাতত তাদের ইতালির লাম্পাদুসা দ্বীপে রাখা হয়েছে। ইতালির প থেকে জানানো হয়েছে, তিনটি নৌকা থেকে অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। প্রতি বছর আফ্রিকান অঞ্চল থেকে প্রচুর সংখ্যক লোক অবৈধ পথে ইউরোপে যায়। তারা ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালিতে প্রবেশ করে। এরপর ইউরোপের অন্যান্য দেশে যায়।
মিসরে নৌদুর্ঘটনায় ৩ অভিবাসীর মৃত্যু
এএফপি জানায়, মিসরের বাহিরা বন্দরের অদূরে গত শনিবার একটি ট্রলারডুবির ঘটনায় তিন অভিবাসীর মৃত্যু ও আরো ৩১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নৌযানটিতে করে এসব অভিবাসীরা অবৈধভাবে ইউরোপ পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ কথা জানিয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীরা উদ্ধারকৃত লোকদের আটক করেছে। কর্মকর্তারা বলেন, ট্রলারটি কী কারণে ডুবে গেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।
রাষ্ট্র পরিচালিত আল-আহরাম পত্রিকা জানিয়েছে, এই ঘটনায় ১৩ সিরীয়, ১৫ সুদানি, দুই ইরিত্রিয়ান ও এক মিসরীয়কে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়া উপকূলের অদূরে একটি জাহাজ দুর্ঘটনায় ৮০০ জন অভিবাসীর মৃত্যুর প্রায় দুই সপ্তাহ পর সর্বশেষ এ ঘটনা ঘটল। ওই ঘটনাটি ছিল সাম্প্রতিক কালের অন্যতম ভয়াবহ নৌদুর্ঘটনা।
শনিবার অপর একটি ঘটনায় ফরাসি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ লিবীয় উপকূলের কাছ থেকে ২১৭ জন লোককে উদ্ধার করেছে। এরা অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীরা জানান, লিবীয় উপকূলে গত মাসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও সিরিয়ার শরণার্থীসহ শত শত অভিবাসীদের ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য এই বিপজ্জনক যাত্রা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
গ্রীষ্মকালে মিসর থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আরো অভিবাসী ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার লোক এভাবে ইউরোপ যাত্রা করে ডুবে মারা গেছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০১৪ সালে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রায় দুই লাখ ১৯ হাজার লোক ইউরোপে পৌঁছেছে এবং বিপজ্জনক পথটি পাড়ি দিতে গিয়ে সাড়ে তিন হাজার মারা গেছে। ২০১৫ সালের এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসী ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছেছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.