উড়োজাহাজ লিজ়ে আনছে বিমান : অপচয় রোধে উদ্যোগী হতে হবে।
এভিয়েশনের অন্যতম শক্তিশালী অঞ্চল হয়ে উঠেছে এশিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি এক্ষেত্রে পেছনে ফেলেছে উত্তর আমেরিকাকে। বিদায়ী বছরের তথ্যমতে, এশিয়ায় যাত্রীসেবায় নিয়োজিত উড়োজাহাজের সংখ্যা সাড়ে আট হাজারের অধিক এবং নতুন হাজারো উড়োজাহাজ নির্মাণের ক্রয়াদেশ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি এশিয়ার আকাশসেবা খাতের চিত্র তুলে ধরে। বিপরীতভাবে যদি বিমান বাংলাদেশের দিকে তাকানো হয়, তবে খুব একটা আশাব্যঞ্জক বার্তা মেলে না। সংস্থাটি বছর বছর লোকসানের রীতি আঁকড়ে খাতটির সক্ষমতা নষ্ট করছে। রয়েছে অব্যবস্থাপনা, অনিয়মের অভিযোগও। এ অবস্থায় বিদ্যমান সক্ষমতা অব্যবহূত রেখেই ফের উড়োজাহাজ লিজ নিচ্ছে বিমান— সংবাদটি সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পুরনো বিমানগুলো দিয়ে সফলভাবে ফ্লাইট পরিচালনা না করে এবং বর্তমান সম্ভাবনাগুলো কাজে না লাগিয়ে নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেয়াটা আদৌ কি যুক্তিযুক্ত? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।
কয়েক মাস আগে চালু হওয়া বোয়িং ড্রিমলাইনার দিয়ে লন্ডনে ফ্লাইট চালুর ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা বাতিল করা হয়। বিচক্ষণরা অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়। অথচ বিমান যেন অভিজ্ঞতা আহরণে অতীতবিমুখ। যাচাই-বাছাই ও ভবিষ্যৎ লাভ-লোকসানের হিসাব না করে বিমান কর্তৃপক্ষের একমুখী সিদ্ধান্ত সংস্থাটির দায় বাড়িয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মূলধনের চেয়ে ঋণের পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতেও রয়েছে। তাই নতুন উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক চাপও বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে বিমান কর্তৃপক্ষ যদি সক্ষমতা অনুসারে তা কাজে লাগিয়ে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াতে পারে, তবে তা লাভজনক হতে পারে। এদিকে বহরে নতুন দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হলে বিমানের লম্বা দূরত্ব পাড়ি দেয়া যানের সংখ্যা দাঁড়াবে আট। অথচ তাদের লম্বা দূরত্বের রুট মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ। কর্তৃপক্ষকে তাই রুট সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যদিও লম্বা দূরত্বে ফ্লাইট চালুর বর্তমান জটিলতা নিষ্পত্তির পর নতুন উড়োজাহাজ ক্রয় বা লিজ নেয়ার বিষয়টি অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। তাছাড়া দীর্ঘ রুটের উড়োজাহাজ দিয়ে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে ফ্লাইট পরিচালনা সক্ষমতা ব্যবহারে অপারদর্শিতার বিষয়টি তুলে ধরে।
বিমানকে লাভজনক খাতে পরিণত করতে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। শুধু উড়োজাহাজ ক্রয় বা লিজ গ্রহণ নয়, অভ্যন্তরীণ অনিয়মের বিরুদ্ধেও বিমান কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার আগে দক্ষ কারিগরি কমিটি প্রেরণ আবশ্যক, যারা ইঞ্জিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের সক্ষমতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। কমিটির সদস্যদেরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিধিবিধান থাকা চাই। বিমানকে উড়োজাহাজ ভাড়া বাবদ অতীতের কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সংস্থাটিকে অব্যবস্থাপনা, অপচয় ও অনিয়মের দায়মুক্ত হতে হবে।