জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত ২৫ জুলাইয়ের আধাঘণ্টার ফোনালাপের লিখিত প্রতিলিপি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। গত বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিলিপি বলছে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে ওই প্রতিলিপি ট্রাম্প-জেলেনস্কি কথপোকথনের হুবহু প্রতিলিপি নয়, বরং সারসংক্ষেপ বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
ইউক্রেনের নির্বাচনে জেলেনস্কির জয়লাভের পর তাঁকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা পাওয়ার কারণে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান এবং অচিরেই আরো মার্কিন অস্ত্র কিনবেন বলে জানান। এরপর ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আপনার কাছ থেকে একটা ব্যাপারে সহযোগিতা চাইছি।’ এ সময় তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন যৌথ তদন্ত পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তদন্তের ব্যাপারে ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি গিলিয়ানি ও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বারের সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গেও কথা বলেছিলেন ট্রাম্প।
ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার লক্ষ্যে তাঁর বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এর পরপরই ট্রাম্প জানান, জেলেনস্কির সঙ্গে কথোপকথনের লিখিত প্রতিলিপি প্রকাশ করা হবে। গত বুধবার সেটা প্রকাশ করা হলেও সমালোচনা থেমে নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, কথোপকথনটি আধাঘণ্টার বলে উল্লেখ করা হলেও লিখিত প্রতিলিপিতে মাত্র ১২ মিনিটের কথাবার্তা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের অভিমত, ওই প্রতিলিপিতে মূল কথোপকথনের অনেক শব্দ এমনকি গোটা অনুচ্ছেদ ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এ টুকরো অংশ নিয়েই ভীষণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবির।
ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যাডাম শিফ বলেন, ‘মাফিয়া বসরা এভাবেই কথা বলেন।’
বিরোধীদের মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি রিপাবলিকান শিবিরে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। ট্রাম্প-জেলেনস্কি কথোপকথন প্রকাশের পর রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি চলমান পরিস্থিতি ‘গভীর সংকটজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্রাম্পের কথাবার্তায় অবশ্য কোনো চিন্তার ছাপ নেই। যে অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা হয়েছে, সেটাকে ‘ঠাট্টা’ অভিহিত করেছেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘কিসের জন্য অভিশংসন? চমৎকার একটা মিটিং করার জন্য কিংবা ফোনে চমৎকার কথাবার্তার জন্য?’
গত ২৫ জুলাই ট্রাম্প-জেলেনস্কি ফোনালাপের ব্যাপারে গত মাসে গোয়েন্দা দপ্তরে গোপনে অভিযোগ করেন এক কর্মকর্তা। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর জন্য সেদিন ট্রাম্প আটবার জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয়, তদন্ত শুরুর জন্য তাঁকে বাধ্য করতে তিনি ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে ঘায়েল করতেই ট্রাম্প এ পন্থায় চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগকারীর দাবি।
বলা দরকার, ইউক্রেনে বাইডেন পরিবারের ব্যবসা আছে। এ ছাড়া বাইডেনের ছেলে হান্টের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যে সরকারি আইনজীবী তদন্ত শুরু করেছিলেন, তাঁকে হটানোর পেছনে বাইডেনের হাত আছে বলে ট্রাম্পের দাবি। সূত্র : এএফপি, গার্ডিয়ান।