যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি নিয়ে ভালোই বিপদে পড়েছেন। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ঠকিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে—এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। সম্প্রতি আদালত ট্রাম্পের আপত্তি সত্ত্বেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নথি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নথিগুলোতে গোপন ‘ট্রেড সিক্রেট’ রয়েছে, এই যুক্তিতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এগুলো প্রকাশের বিরোধিতা করেছিলেন। বলা হয়, কীভাবে উচ্চমূল্যের জমি ও ভবন বাজারে বিকোনো যায়, নথিতে তার কলাকৌশল রয়েছে। তা সত্ত্বেও স্যান ডিয়েগোর একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক গনজালো কুরিয়েল ‘জনস্বার্থে’ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার অনুরোধে নথিগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেন।
নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি ঠিক সে অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় নয়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েব-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানে ট্রাম্পের মালিকানা প্রায় নিরঙ্কুশ। মোটা অর্থের বিনিময়ে এখানে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা বিষয়ে সেমিনার ও আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা ছিল। কোনো সনদ দেওয়ার এখতিয়ার এর ছিল না। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে এসব সেমিনার পরিচালনা করবেন, সে কথা বিজ্ঞাপনে প্রচারিত হলেও তিনি নিজে কোনো সেমিনারে অংশ নেননি।
ট্রাম্প কঠোর ভাষায় তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলার সমালোচনা করেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে ফেডারেল বিচারক তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি একজন হিস্পানিক। কয় দিন আগে ট্রাম্প স্যান ডিয়েগোতে নির্বাচনী জনসভায় বলেন, ‘এই বিচারক একজন মেক্সিকান, সে জন্যই আমার বিরুদ্ধে তাঁর যত রাগ।’
এর আগে ওয়াশিংটন পোস্ট ট্রাম্পের বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেছিল, যে বিশ্ববিদ্যালয় এখন চালু নেই, তার ‘ট্রেড সিক্রেট’ প্রকাশ করায় কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। ট্রাম্পের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এখন বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে তা ফের চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিচারক কুরিয়েল অবশ্য ‘সে কথা কেবল জল্পনা-কল্পনা’—এই যুক্তিতে তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ২ জুনের মধ্যে মোট ১ হাজার পাতার ওই সব নথি প্রকাশের নির্দেশ দেন।
ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রাক্তন ছাত্র জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্প ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে যে যৌথ মামলা করেছেন, নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচন শেষে তার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। এ ছাড়া নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্নাইডারম্যান ট্রাম্প বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৫ হাজার ছাত্রকে ঠকিয়েছে—এই অভিযোগ তুলে ৪ কোটি ডলারের এক ভিন্ন মামলা দায়ের করেছেন। মাত্র তিন দিনের সেমিনারের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় মাথাপিছু ১ হাজার ৪৯৫ ডলার বেতন আদায় করত। বিজ্ঞাপনে ছাত্রদের প্রলুব্ধ করতে ট্রাম্প নিজে বলতেন, অতি উচ্চমানের অধ্যাপকেরা এতে পড়াবেন। তাঁদের প্রত্যেককে তিনি নিজে বাছাই করেছেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল স্নাইডারম্যান তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, যাঁদের সেমিনার পরিচালনায় পাঠানো হয়, তাঁরা কেউই স্বীকৃত অধ্যাপক ছিলেন না। আর ট্রাম্পও ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের কাউকে নির্বাচন করেননি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একাধিক কর্মকর্তাও এ কথা স্বীকার করেছেন।
ধনকুবের ট্রাম্প নিজেকে একজন ‘অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী’ হিসেবে দাবি করলেও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কয়েক বছর চলার পরেই বন্ধ হয়ে যায়। রিপাবলিকান দলের বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এ বছর নির্বাচনী বিতর্কে তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি করার অভিযোগ তোলেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আদালতে প্রমাণ করবেন অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা।
আরও খবর