সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দেশগুলোকে গোয়েন্দা বিমানসহ বিভিন্ন সামরিক সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যেসব দেশ আইএসসহ বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনের তৎপরতা বন্ধে লড়াই করছে, তাদের এই সহায়তা দেয়া হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র আগের মতোই মিত্রদের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
শনিবার পোল্যান্ডে শেষ হয়েছে ন্যাটোর দুই দিনব্যাপী সম্মেলন। সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে দেয়া বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ন্যাটোর মিত্র ও ইউরোপকে নিরাপত্তা রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ৭০ বছরের প্রান্তে দাঁড়িয়ে ন্যাটো জোটকে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ওবামা।
ওবামা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও তুরস্ককে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সার্বভৌমত্বকে চোখ রাঙাচ্ছে রাশিয়া । এ অবস্থায় অবশ্যই আমাদের যৌথ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। জোটের মিত্রদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না’।
ক্ষমতার মেয়াদে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইউরোপের মিত্রদের সাথে সম্পর্কোন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন ওবামা। ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর ইউরোপের সার্বিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা করতে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
পোলান্ডের রাজধানী ওয়ারশয় সদস্য সমাপ্ত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে নৌ সামরিক টহল, আফগানিস্তানে সামরিক উপস্থিতি ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে অর্থ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এই সম্মেলনে। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ লোক আইএসের মতো সংগঠনগুলোর কারণে অসহায় ও উদ্বাস্তু অবস্থায় আছে। ইরাক আইএসবিরোধী লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উল্লেখ করে স্টলটেনবার্গ বলেন, দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ ন্যাটো শিগগিরই শুরু করবে ।
পাশাপাশি ন্যাটো জোট তিউনিসিয়ায় একটি গোয়েন্দা কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি। আইএস সবচেয়ে বেশি সদস্য সংগ্রহ করে এই দেশটি থেকে। এ ছাড়া তিউনিসিয়ার বিশেষ অভিযান বাহিনীকেও সহায়তা দেয়া শুরু করবে ন্যাটো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ জোটের ২৮টি দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন সম্মেলনে। সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে সহায়তার জন্য গোয়েন্দা বিমান সরবরাহ করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ন্যাটো প্রধান এই সিদ্ধান্তকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহায়তা প্রদানের একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন। ন্যাটোর কূটনীতিকরা বলেছেন, চলতি গ্রীষ্মেই এই গোয়েন্দা বিমানের কার্যক্রম শুরু হবে বলে তারা আশা করছেন।
সম্মেলনে ভূমধ্যসাগরে নতুন করে নৌ টহল জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাটো। অপারেশন সি গার্ডিয়ান নামের ওই নৌ অভিযানের উদ্দেশ্য হবে সন্ত্রাস প্রতিরোধ। এ ছাড়া মানব পাচার ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সহায়তা করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জর্দানের সাথে সহায়তা জোরদার করা হবে এবং সশস্ত্রগ্রুপগুলোর মোকাবেলায় নীতি নির্ধারণে লিবিয়ার নতুন সরকারকে সহায়তা করা হবে। স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা আমাদের মিত্রদের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা দেবো, যাতে তারা তাদের দেশকে নিরাপদ রাখতে পারে এবং সহিংস গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে’।