বিশাল হলঘরে ভরা ২০ হাজার মানুষের উল্লাস ও আনন্দাশ্রুর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজ দলের মনোনয়ন গ্রহণ করলেন হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় গত বৃহস্পতিবার ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে মনোনয়ন গ্রহণ করে হিলারি বললেন, ‘আজ আমি আপনাদের বলছি, সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।’ সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি আরও বলেন, ‘যখন কোনো ছাদ নেই, তখন সীমানা আকাশটাই।’
মনোনয়ন নেওয়ার উৎসবের আমেজ শেষ না হতেই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন হিলারি। ‘উই আর স্ট্রঙ্গার টুগেদার’ (আমরা একসঙ্গে বেশি শক্তিশালী) স্লোগান নিয়ে গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে হিলারির ‘বাসযাত্রা’। এই যাত্রার ফলাফল নির্ধারিত হবে ঠিক ১০১ দিন পর, ৮ নভেম্বর ২০১৬। সেদিন নির্ধারিত হবে, কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন, নাকি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রায় ১০০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। আর এই প্রথম একজন নারী দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে কোনো প্রধান দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেন। সেই ইতিহাস গড়লেন এমন একজন নারী, প্রেসিডেন্ট ওবামা যাঁকে ‘এ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও প্রস্তুত’ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
হিলারি ক্লিনটন ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের, সেই সঙ্গে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত। ফার্স্ট লেডি, সিনেটর ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নানা ব্যক্তিগত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। দলের মনোনয়ন নেওয়ার সময় তিনি সহজ অথচ স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে বললেন, নভেম্বরের নির্বাচনে কেন তাঁকে নির্বাচিত করা গুরুত্বপূর্ণ। হিলারি আরও বলেন, এর বিকল্প হবে এমন এক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা, যিনি কেবল অনভিজ্ঞ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অযোগ্যই নন, ‘রীতিমতো বিপজ্জনক’।
হিলারি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নিজের দল রিপাবলিকান পার্টিকে আশা থেকে হতাশার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন। তিনি চান আমাদের বিভক্ত করতে। চান আমরা যাতে একে অন্যের প্রতি ভীত হই। …কিন্তু আমরা ভীত নই। অন্য সব সময় যেমন আমরা সব বাধা অতিক্রম করে উঠে দাঁড়িয়েছি, এবারও উঠে দাঁড়াব।’
হিলারি ক্লিনটন বলেন, ট্রাম্প সামান্য উসকানিতে নিজের মেজাজ হারান। কোনো সাংবাদিক তাঁকে কঠিন প্রশ্ন করলে, বিতর্কে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লে অথবা কোনো প্রতিবাদকারীর সম্মুখীন হলে তাঁর মাথা গরম হয়ে ওঠে। ‘এমন একজন মানুষকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কল্পনা করুন। টুইটারে বার্তা পাঠিয়ে যাঁকে খেপিয়ে তোলা যায়, তাঁর হাতে কীভাবে আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণভার তুলে দিই?’
গত সপ্তাহে ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ‘বিপর্যস্ত ও মুখ থুবড়ে পড়া’ যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। দলের মনোনয়ন নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, একমাত্র তিনিই পারেন যুক্তরাষ্ট্রকে তার পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে দিতে। অন্যদিকে হিলারি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের সম্মেলনে এক ভিন্ন আশাবাদী, শক্তিধর ও সফল যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরেন। বলেন, একা নন, সবাইকে নিয়েই এ দেশে সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবেন। সে কথার প্রতিধ্বনি করে হিলারি বৃহস্পতিবারও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাতে হাত মিলিয়ে দেশকে আরও অধিক মুক্ত, অধিক ন্যায়সম্মত ও অধিক শক্তিশালী করেছে। তারা কেউই একা এই কাজটি সম্পন্ন করেনি। হিলারি স্বীকার করেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশ এগিয়েছে, কিন্তু সেই সাফল্যের অংশীদার সবাই নয়। অর্থনৈতিক স্থবিরতার শিকার অনেকেই, কিন্তু একসঙ্গে কাজ করলে সেই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
৫৭ মিনিট স্থায়ী এই ভাষণের সময় ‘হিলারি, হিলারি’ ও ‘আমেরিকা, আমেরিকা’ স্লোগান দিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত মানুষ সমর্থন জানান হিলারিকে। বাছাইপর্বে হিলারিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের কয়েক শ সমর্থক পাল্টা স্লোগান দিয়ে হিলারির মনোনয়নে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশের চেষ্টা করেন। কিন্তু হলভর্তি মানুষের সোল্লাস করতালি ও মুহুর্মুহু স্লোগানে তাঁদের সেই প্রতিবাদ চাপা পড়ে যায়। হিলারি নিজেও তাঁর বক্তৃতায় স্যান্ডার্স ও তাঁর সমর্থকদের উপস্থিতির স্বীকৃতি জানান।
হিলারির ভাষণের আগে তাঁর একমাত্র মেয়ে চেলসি ক্লিনটন মঞ্চে উঠে নিজের মায়ের পরিচয় তুলে ধরেন। চেলসি তাঁর মাকে ‘চমৎকার, চিন্তাশীল এবং সদা হাসিখুশি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। বলেন, ‘মা সব সময়ই আমার পাশে থেকেছেন।’