শঙ্কা বিমানবন্দর মহাসড়কে স্থায়ী যানজটের

দুই কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকা। যানজট ও পরিবহন নৈরাজ্য এখন নগরবাসীকে দিন দিন কাবু করে ফেলছে। রাস্তায় নামলেই যানজটে পড়ে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একই স্থানে গণপরিবহনগুলোকে বসে থেকে পুড়তে হচ্ছে মূল্যবান জ্বালানি।

সেই পরিস্থিতি থেকে স্বস্তি ফেরাতে নগরবাসীর সুশৃঙ্খল বসবাস ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নানা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কিন্তু প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রিতা নানা অনিয়মের কারণে কিছু কিছু প্রকল্প হয়ে উঠে জনসাধারণের জন্য ভোগান্তির কারণ।

বিমানবন্দর-গাজীপুর রুটের প্রকল্পের কাজের কারণে মাত্র একটি লেনে গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার ফুটপাথের পাশের অংশে খানাখন্দ হয়ে পড়ে আছে। এসব খানাখন্দে পানি জমে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। পথচারী ও যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় পড়ে থাকলেও প্রকল্প ও সড়ক ও জনপথের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নজর নেই সেদিকে।

বিমানবন্দর ইন্টারসেকশনে উত্তর ও দক্ষিণগামী যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ করতে রাস্তার উভয় পাশে ২টি পৃথক ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ দ্রতগতিতে এগিয়ে চলছে। ৬ লেনের জসিমউদ্দিন ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন রয়েছে, যার মধ্যের ২টি বিআরটি এর জন্য নির্ধারিত।

বিআরটি সিস্টেম চালু করার মাধ্যমে উত্তরা ও গাজীপুর শহর এলাকায় এবং এ করিডোরের উভয় পাশের আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রকল্পে বলা হয়।

কিন্তু এই বিআরটি প্রকল্পটি এখন দুর্ভোগের প্রকল্প
হিসেবে স্থান পেয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। বছরের পর বছর বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের করতে হচ্ছে সীমাহীন কষ্ট। ১০ মিনিটের যাতায়াতের পথ যেতে হচ্ছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টায়।

এই প্রকল্পে শুধু লোকজনের দুর্ভোগেই সীমাবদ্ধ নয়। অনিয়ম ও অসাবধানতার কারণে প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ইতোমধ্যে বিআরটি স্টেশনের নকশাগত দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে। একারণে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে যানজট স্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের কাজে সিস্টেমে দুর্বলতা, প্রকল্পের কাজের কারণে রাস্তা খানাখন্দক থাকা, এই প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন চলতে থাকার করণে এই সড়কের যানজট স্থায়ী রূপ নিতে পারে। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও যানজটের সম্মুখীন হতে হবে যাত্রীদের। কারণ এই প্রকল্পের কাজের রাস্তার মাঝখানেই নির্মান করা হয়েছে বাস বে।

যেখানে বাস থামবে, লোকজন বাসে উঠবে এবং নামবে। বাস বে নির্মাণ করার কারণে মূল সড়কের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবহন চলাচল করতে পারবে না।
বিআরটি রুট-সংলগ্ন সড়কে সাধারণ যানবাহন চলার জন্য সাত মিটার জায়গা থাকলেও স্টেশন এলাকায় তা কমে দাঁড়াবে ছয় মিটারে। নির্মাণাধীন বিআরটি করিডোরের ১৬ কিলোমিটার মাটির সমান্তরাল (অ্যাটগ্রেড) অংশে স্টেশন রয়েছে ১৯টি। চলতে গিয়ে এর প্রায় প্রত্যেকটিতেই বাধাপ্রাপ্ত হবে সাধারণ যানবাহন।

এরই মধ্যে বিআরটির স্টেশনগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। স্টেশন এলাকায় সাধারণ যানবাহন চলার পথ সরু হয়ে যাওয়ায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে যানজটও। ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়কে যানজট স্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টঙ্গী এলাকার বাসিন্দা আরিফ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কটি এখন যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খানাখন্দ, প্রকল্পের কাজের জিনিসপত্র রাস্তায় রাখার কারণে এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও অযোগ্য হয়ে পরেছে। বছরের পর বছর চলতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই সড়কে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকছে।

সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা ইনকিলাবকে বলেন, বিআরটি প্রকল্পটি দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর সড়কে এই প্রকল্পের কারণে যানজট স্থায়ী হতে পারে। প্রকল্পের আগে যাত্রীদের দিক বিবেচনায় আনতে হবে। যা এই প্রকর্পে লক্ষ করা হয়নি। ঠিকাদারদের গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরির মতো দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম, অর্থ, প্রয়োজনীয় উপকরণ কিছুই নেই। এ কারণে মিল ছিলো না তাদের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবেরও। গত ১০ বছর ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় জমেছে ইকুইপমেন্ট জঞ্জাল। এই জঞ্জাল অপরিকল্পিত-অব্যবস্থাপনার মধ্যে মানুষকে যেমন কষ্ট দিয়েছে, তেমন কেড়ে নিয়েছে সময় এবং অর্থ।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক ইনকিলাবকে বলেন, কন্ট্রাকশন এমন একটি শিল্প যেখানে টাকা দেয়া হয় তবুও এমন একটি জনবহুল জায়গায় এভাবে কাজ হচ্ছে এটা কাম্য নয়। এতে নিরিহ মানুষ শিকার হচ্ছে। এই প্রকল্প করার আগে বিআরটির দর্শন অনুসরণ করা হয়নি। এসব কারণেই এখন আমাদের উন্নয়ন যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিআরটি করার জন্য যে পরিমাণ রাইট অফ ওয়ে প্রয়োজন, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে তা নেই। যদি প্রয়োজনীয় রাইট অফ না থাকে, তাহলে জমি অধিগ্রহণ করে এটা পর্যাপ্ত করতে হয়। রাস্তার সক্ষমতা বাড়ানোর বদলে স্টেশন এলাকাগুলোয় আরো সংকীর্ণ করে ফেলা হয়েছে। ফুটপাথও সরু করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.