বিমানে পাইলটের বসার স্থানকে ককপিট বলা হয় কেন

সামরিক কিংবা বেসামরিক বিমানের ভেতরে যে অংশে পাইলটরা বসেন, এভিয়েশনের ভাষায় এটিকে বলে ‘ককপিট’। ককপিটে বসেই একজন পাইলট যাত্রী ও কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং মূলত বিমানটি পরিচালিত হয় এই অংশে থাকা যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সাহায্যেই।

‘ককপিট’ এখন সর্বমহলে একটি পরিচিত শব্দ। কেন পাইলটের বসার অংশকে ককপিট নামে ডাকা হয়?

জেনারেল এভিয়েশন নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, এর কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে। ‘ককপিট’ টার্মটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৫০০ সালের দিকে। যে জায়গায় মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হতো, সেটিকে ককপিট বলা হতো। মোরগ লড়াইয়ের সময় কোনো মোরগ যাতে পালাতে না পারে, এজন্য মাটি খুঁড়ে একটি গর্তের মতো করে এই লড়াইয়ের আয়োজন করা হতো। এই মাটি খুঁড়ে করা গর্তের মধ্যে মোরগ লড়াই থেকে এসেছে ইংরেজি ‘cockpit’ শব্দটি। (cock অর্থ মোরগ, pit অর্থ গর্ত)।

আধুনিক বিমানের ককপিটের সঙ্গে এই মোরগ লড়াইয়ের ককপিটের কোনো সম্পর্ক নেই, কারণ ষোড়শ শতাব্দীতে মানুষের মাথায় বিমানের ধারণা আসেনি। তবে বর্তমানে ককপিট বলতে যা বোঝানো হয়, তা এসেছে সম্ভবত লন্ডনের ‘দ্য ককপিট’ নামের একটি থিয়েটার থেকে। এই থিয়েটারটি তৈরি করা হয়েছিল একটি প্রাচীন মোরগ লড়াইয়ের স্থানে এবং পরবর্তীতে এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অফিস ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাচ্ছে, তা এখান থেকে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। লন্ডনবাসীদের কাছে এই ‘ককপিট’ শব্দটি দিনকে দিন পরিচিত হয়ে ওঠে। যেহেতু এই ভবনগুলোতে বসে সরকারি কর্মকর্তারা দেশ পরিচালনা করেন, তাই ভবনগুলোকে দেখা হতো এক ধরণের কমান্ড সেন্টার হিসেবে। এক পর্যায়ে লন্ডনবাসীরা কমান্ড সেন্টারের প্রতিশব্দ হিসেবে ককপিট শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে।

সপ্তদশ শতকের দিকে আয়তনে ছোট্ট কিন্তু ভয়ঙ্কর যুদ্ধক্ষেত্রকে সৈন্যরা ককপিট নামে ডাকতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিমানের পাইলটরা এই শব্দটি ব্যবহার করতো যুদ্ধক্ষেত্রে যে জায়গাটি থেকে যুদ্ধবিমানগুলো পরিচালনা করা হতো, সেই জায়গা বোঝাতে। কারণ যুদ্ধবিমানগুলো তখন একটি অপারেশন সেন্টার থেকে পরিচালনা করা হতো এবং যুদ্ধও হতো ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক। যেহেতু, ছোট একটি এলাকায় (pit) অনেক যুদ্ধ হতো এবং এই যুদ্ধ পরিচালিত হতো যুদ্ধক্ষেত্রের ভেতর থেকেই, তাই পাইলটরা একে ককপিট নামে ডাকতেন। যদিও বর্তমানে ককপিট দিয়ে বিমানের ভেতরের পরিচালন অংশ বোঝানো হয়।

নৌকাবাইচে অংশগ্রহণকারী নৌকার যিনি কর্ণধার, তাকে ইংরেজিতে বলা হতো cockswain, যদিও বর্তমানে এই বানান পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে coxswain. এই নৌকাগুলোর যেখানে বসে দিক পরিবর্তন করা যায়, সেই অংশকে বলা হয় ককপিট। এখনো জাহাজের যে অংশ থেকে এটি চালানো হয়, সেটিকে ককপিট নামে ডাকা হয়। যদিও এমন সম্ভাবনা আছে যে এভিয়েশন থেকেই ককপিট শব্দটি এখানে এসেছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.