নীল আকাশ আর সাদা মেঘের ভেলায় ভাসতে কার না ভালো লাগে! আকাশে ভ্রমণের এ ভালো লাগা যদি পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে আপনাকে বাণিজ্যিক বা পেশাদার পাইলট হতে হবে। বৈচিত্র্যময় এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুই ধরনের পাইলট হওয়া যায়। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনকাজে ব্যবহূত বেসামরিক উড়োজাহাজ এবং যুদ্ধবিমানের পাইলট।
বেসামরিক উড়োজাহাজ চালানোর জন্য প্রয়োজন কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। কারো যদি কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স থাকে, তাহলে সে সারা বিশ্বেই উড়োজাহাজ নিয়ে যেতে পারবে। এ লাইসেন্স দেয় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)। সারা বিশ্বে ১৯৪৪ সালে আইসিএও চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে এক দেশের উড়োজাহাজ অন্য দেশের ওপর দিয়ে যাতায়াতের অনুমোদন পায়। বাংলাদেশে আইসিএও লাইসেন্স অনুমোদন দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার জন্য যোগ দিতে হবে বিমান বাহিনীতে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বিমান বাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যায়। সেই পরীক্ষার পর মেডিকেল টেস্ট এবং আরো কিছু সামরিক নিয়মকানুনে উত্তীর্ণ হতে পারলেই যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়া যায়। এছাড়া সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীতেও এভিয়েশন কোর রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে, পরে এভিয়েশন কোরের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়া যায়। বেসামরিক উড়োজাহাজের পাইলট হতে হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অথবা ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত থাকতে হবে এবং এর সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফিট হওয়া আবশ্যক। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফিট হওয়া বলতে হার্টের সমস্যা, কালার ব্লাইন্ড কিংবা উচ্চতাভীতি রয়েছে কিনা সেসব ব্যাপার যাচাই করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মনে একটা দ্বিধা থাকে যে চশমা পরলে হয়তো পাইলট হওয়া যায় না। কিন্তু বেসামরিক উড়োজাহাজের পাইলট হওয়ার ক্ষেত্রে চশমা পরা তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। এক্ষেত্রে চশমা পরার পর কারো চোখ যদি ৬/৬ হয়, তাহলে সিভিল এভিয়েশন উড়োজাহাজ চালানোর অনুমতি দেয়।
মেডিকেলি কোনো সমস্যা না থাকলে বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশনের অধীনে আরিরাং ফ্লাইং স্কুল, গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি এবং বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব নামের তিনটি ফ্লাইং স্কুলের যেকোনো একটিতে ভর্তি হওয়া যায়।
ফ্লাইং কোর্সে দুই বছরে ২২টি বিষয় পড়ানো হয়। এ কোর্সের মান বাংলাদেশে স্নাতক কিংবা ডিপ্লোমা হিসেবে ধরা হয় না। এটি শুধু উড়োজাহাজ চালানোর ছাড়পত্র দেয়। এসব ফ্লাইং কোর্সের পাস মার্কস শতকরা ৭৫। কিছু সাবজেক্টে পাস মার্কস শতকরা ৯০। সুতরাং এসব কোর্স পড়তে হলে অধ্যবসায়ী হতে হবে। সব কোর্সে উত্তীর্ণ হলেই কেবল উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পাওয়া যায়।
এ লাইসেন্স পাওয়ার পর এয়ারলাইনসে আবেদন করতে হয়। এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল পাইলট। প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার মাসিক বেতন হতে পারে দেড়-দুই লাখ টাকা। পাইলট হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সাহসী এবং প্রচুর পড়াশোনা করার মানসিকতা নিয়ে সামনে এগোতে হবে।
লেখক : হাসান আল জুবায়ের, ফ্লাইট ইনস্ট্রাক্টর, গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি