যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোট গ্রহণ মেশিনের মাধ্যমে ভোটে কারচুপি হয়েছে—গ্রিন পার্টির এই অভিযোগের ভিত্তিতে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ভোট পুনর্গণনা শুরু হয়েছে। পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানেও একই অভিযোগে ভোট পুনর্গণনার দাবি করেছে গ্রিন পার্টি। যদিও এ প্রশ্নে এখনো তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে অনুরোধ জানানোর শেষ তারিখ আজ বুধবার।
নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও তাঁর প্রচারশিবির এই পুনর্গণনায় অংশ নিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের বিশেষ কোনো আগ্রহ নেই, এ কথা ডেমোক্রেটিক দলের ও হিলারি শিবিরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পুনর্গণনার ফলে নির্বাচনের ফলাফল বদলানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও এই পুনর্গণনাকে তাঁরা বিরোধিতা করছেন না মূলত দলীয় সমর্থকদের শান্ত করতে। হিলারির পরাজয়কে এখনো মেনে নিতে পারেনি এমন দলীয় সমর্থকদের উৎসাহেই গ্রিন পার্টি এই পুনর্গণনার জন্য মাত্র এক সপ্তাহে প্রায় ৬০ লাখ ডলার চাঁদা তুলতে সক্ষম হয়েছে, যা এই দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সংগৃহীত চাঁদার দ্বিগুণ।
ডেমোক্রেটিক নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ জো ট্রিপি পুনর্গণনার এই চেষ্টাকে অহেতুক পণ্ডশ্রম হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিল স্টাইনের কারণে হিলারি উইসকনসিনে হেরেছেন। তিনি সেখানে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, ঠিক সেই পরিমাণ ব্যবধানে ট্রাম্পের কাছে পরাস্ত হয়েছেন হিলারি। ‘জিল স্টাইনের কারণে আমরা উইসকনসিন হারিয়েছি, সেখান থেকে নজর ফেরাতে তিনি পুনর্গণনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন’—পরিহাসের সঙ্গে ট্রিপি মন্তব্য করেন।
জিল স্টাইন নিজেও স্বীকার করেছেন নির্বাচনের ফলাফল বদলে যাবে তা তিনিও মনে করেন না। কিন্তু নির্বাচনের স্বচ্ছতার জন্য এই ভোট পুনর্গণনা প্রয়োজন। সিবিএস নিউজকে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ, সেটা বদলানো দরকার। এই পুনর্গণনার ভেতর দিয়ে সেই দাবি আমি সবার সামনে তুলে ধরেছি।’
অভিযোগ নাকচ হোয়াইট হাউসের: ট্রাম্প গত রোববার টুইটারে দাবি করেন, লাখ লাখ লোক হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে জাল ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওই জাল ভোটগুলো বাদ দিলে আমি মোট ভোটের হিসাবেও জয়ী হব।’ তবে তাঁর এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জশ আরনেস্ট সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হিসেবে যা আমি বলতে পারি তা হলো, (ট্রাম্পের) ও রকম দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।’
হিলারির নির্বাচনী শিবিরের উপদেষ্টা মার্ক এলিয়াস বলেন, ‘নির্বাচনে ষড়যন্ত্র হয়েছে, এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু সঠিক ভোট গণনার বিষয়ে আশ্বস্ত হতে ভোট পুনর্গণনার উদ্যোগে আমাদের অংশ নিতে হবে। কেননা হিলারির পক্ষে রায় দেওয়া ৬ কোটি ৪০ লাখ ভোটারের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।’
ওবামাকেয়ারের সমালোচক হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী: ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সংস্কারে তাঁকে সহায়তার জন্য ওবামাকেয়ারের একজন কঠোর সমালোচক এবং ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এক নীতি বিশেষজ্ঞকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ট্রাম্প জর্জিয়ার অর্থোপেডিক শল্যচিকিৎসক কংগ্রেস সদস্য টম প্রাইসকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সরকারের স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও বিমার মানদণ্ড দেখভালকারী গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সেন্টার ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিসেসের (সিএমএস) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন কনসালট্যান্ট সীমা ভার্মাকে। গতকালই ট্রাম্প তাঁদের নাম ঘোষণা করেন। প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান পার্টির সদস্য টম প্রাইস গত দুই বছর হাউস বাজেট কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আরও খবর