আরো ৩ এয়ারবাস ঝুঁকিপূর্ণ

16476736721_6d7e75d4cc_hপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিমানে চড়ে হাঙ্গেরি যাচ্ছিলেন সেটির মতো আরো তিনটি বিমানকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সোনা চোরাচালানের একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে এই তিন এয়ারবাসের বিরুদ্ধে। এরপরও ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের চলাচলের জন্য এসব বিমান ব্যবহূত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের মতো এই তিন বিমানও জব্দ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। পরে বিমান কর্তৃপক্ষ মুচলেকা দিয়ে সেগুলো ছাড়িয়ে নেয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসা বিজি ০৪৬ এয়ারবাসের সিটের নিচে থেকে ১৪ কেজি চোরাই সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল একই রুটের বিজি ০৫২ এয়ারবাস থেকে ১০৫ কেজি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় বিমানের আনিস উদ্দিন ভূইয়া ও এয়ারক্রাফট মেকানিক এসিস্টেন্ট মাসুদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এরও আগে ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসা বিজি ৭০২ এয়ারবাস থেকে ১২৪ কেজি চোরাই সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রাঙা প্রভাত নামের বিজি ০৪৮ বোয়িং ৭৭৭ এয়ারবাস থেকে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৬২ কেজি চোরাই সোনা উদ্ধার করা হয়েছিল।

চোরাই সোনার বার উদ্ধারের প্রতিটি ঘটনায় আলাদা তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রতিটি কমিটিই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন ও বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় এসব বিমানকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি এও বলেছে, যেহেতু এইসব বিমানে ভিআইপি ও ভিভিআইপিরা চলাচল করেন সেহেতু তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক হতে হবে।
দেখা গেছে, তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশের পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের জন্যও বলেছে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিমানগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করার সুপারিশও করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ বিমানের অধিকাংশ এয়ারবাসই পুরনো। নতুন কেনা বিমানগুলোতে চোরাচালানের কারণে অনেক নাট-বোল্ট বারবার খোলা হয়েছে। ফলে ওইসব নাট-বোল্টের জায়গায় মরিচা পড়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে বিশেষজ্ঞদের অনুসন্ধানে।

তদন্ত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, বিমানের ভেতর থেকে চোরাই সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে এগুলো লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এয়ারবাস যেখানে থাকে সেখানে সাধারণ যাত্রীদের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। ফলে বিমানের কোন না কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সহায়তায় এসব চোরাচালানির চেষ্টা করা হয়। ফলে শুল্ক আইনের বিধান অনুযায়ী চোরাই সোনার বার বহনকারী এয়ারক্রাফটিও আটক করা হয়।
পরে অবশ্য বিমান কর্মকর্তাদের জিম্মায় বিমানগুলো দেয়া হয়। কিন্তু কোনো সংস্কার তারা করেনি।
২০১৩ সালের বিজি ৭০২ এয়ারবাস থেকে ১২৪ কেজি চোরাই সোনার বার উদ্ধারের ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন বিমানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়। এভাবে প্রতিটি চোরাচালান ধরার পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এসব মামলার তদন্ত শেষ করে একটিরও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, ‘সোনার বার চোরাচালানের মামলাগুলোর সঠিক তদন্ত করে বিচার করা হলে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটতো না। কিন্তু বিচার না হওয়ার কারণেই এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
সূত্রঃইত্তেফাক

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.