মিথ্যার জোরে জিতেছেন ট্রাম্প!

2908ef630bea68a14134dcc37f0052ea-2পোপ ফ্রান্সিস প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে নিয়োজিত এফবিআই এজেন্ট খুন হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা দিতে সম্মত হয়েছেন। সিএনএন জানিয়েছে, ফ্লোরিডায় ভোটবুথ ফেরত ভোটারদের জরিপ অনুসারে, অধিকাংশ মানুষই ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছে। যে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়, হিলারির ক্যাম্পেইন থেকে তাদের বাসে করে নিয়ে আসা হয়।
ওপরের সংবাদ শিরোনামগুলো যদি আপনারা ইতিমধ্যে দেখে থাকেন, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। মার্কিন নির্বাচনের সময় ফেসবুক ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই খবরগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরের সবগুলো ভিত্তিহীন। পোপ ফ্রান্সিস কখনোই ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি, অথবা কোনো এফবিআই এজেন্ট খুন হননি বা আত্মহত্যা করেননি। ফেসবুকের মাধ্যমে অথবা মিথ্যা তথ্যসূত্র ব্যবহার করে খবরগুলো ছড়ানো হয়েছে। ভাবা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পেছনে এসব মিথ্যা খবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ডেনভার গার্ডিয়ান বা দি রাইটিস্ট এ রকম নাম ব্যবহার করে খবরগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ফেসবুকের এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যার মাধ্যমে প্রকাশিত খবর সত্য কি মিথ্যা, তা নির্ণয় সম্ভব। মুখরোচক খবর, ফেসবুকে পোস্ট হওয়ার পরই লাখ লাখ লোক তা ‘শেয়ার’ করে। এটা খুবই সম্ভব যে এসব ‘মিথ্যা’ খবর পাঠের ফলে অনেকেই কাকে ভোট দেবেন, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। যেহেতু খবরগুলো ট্রাম্পের পক্ষে, ফলে অনুমান করা হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের অনুকূলে যাওয়ার সেটি একটি কারণ। আবার বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নামে নকল টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও মিথ্যা খবর রটানো হয়। যেমন মেইন অঙ্গরাজ্যের বেইটস কলেজের নাম ব্যবহার করে এক টুইটার বার্তায় জানানো হয়, ভোট দিতে হলে ছাত্রদের যাঁর যাঁর গাড়ির নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই বার্তার কারণে অনেক ছাত্রছাত্রী হয়তো ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে সিএনএনকে উদ্ধৃত করে জানান, সারা দেশে ভোটিং মেশিনে গন্ডগোল রয়েছে। অথচ সিএনএন একটি ‘কাউন্টি’র কথা বলেছিল, ‘কান্ট্রি’র কথা বলেনি।
মিথ্যা সংবাদ এ বছরের নির্বাচনে এত বড় একটা সমস্যা হয়ে ওঠে যে ভোটারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পরামর্শ দিতে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, ফেসবুকের কারণে এবার তাঁর জয় হয়েছে। ‘ধন্যবাদ ফেসবুক’, তিনি নিজ টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর সমর্থকদের জানান। ট্রাম্প অবশ্য মিথ্যা সংবাদের জন্য জয়ের কথা বলেননি, তথ্যসূত্র হিসেবে এদের প্রভাবের কথাই বলছিলেন। টুইটারের তাঁর ১ কোটির ওপরে অনুসারী রয়েছেন।
ফেসবুক বা নকল ইন্টারনেট সাইট থেকে মিথ্যা খবর প্রচার নতুন কোনো ব্যাপার নয়। ইন্টারনেটের ব্যবসায়িক নিয়ম অনুযায়ী কোনো তথ্য নির্দিষ্ট সংখ্যায় শেয়ার হলে তাতে বিজ্ঞাপন জুড়ে দেওয়া হয় ও সাইটের মালিক তার জন্য মুনাফা সংগ্রহে সক্ষম হন। যত বেশি শেয়ার, তত বেশি মুনাফা। নিউইয়র্ক টাইমস-এর অনুসন্ধান অনুসারে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিতে হিলারির পক্ষ থেকে বাস ভাড়া করে লোক পাঠানো হচ্ছে, এই মিথ্যা খবরটি রটায় অস্টিন, টেক্সাসের এক মার্কেটিং কোম্পানির মালিক এরিক টাকার। টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁকে অনুসরণ করে এমন লোকের সংখ্যা ছিল ৪০। বাসে করে লোক নেওয়ার খবরটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টুইটারে তা শেয়ার করা হয় ১৬ হাজার আর ফেসবুকে সাড়ে ৩ লাখ বার।
মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ যে নির্বাচনকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে, তার একটি বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা এসেছে বাজফিড নামক ওয়েবসাইটের বিশ্লেষণ থেকে। এতে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম পর্যায়ে সিএনএন বা নিয়ইয়র্ক টাইমস-এর মতো নির্ভরশীল সংবাদমাধ্যমের খবর মিথ্যা খবরের চেয়ে অনেক বেশি ফেসবুকে বা টুইটারে শেয়ার করা হয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের কয়েক দিন ঠিক উল্টোটা ঘটে। বাজফিড মোট ২০টি খবর বিশ্লেষণ করে দেখেছে এর ১৭টিই ডাহা মিথ্যা, যা সত্যি খবরের চেয়ে অনেক বেশি প্রচার পায়।
মাত্র একজন লোক নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে মিথ্যা খবর ছড়াতে পারে, তার এক চমৎকার উদাহরণ দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। পল হর্নার নামে এক ব্যক্তি অনেক আগে থেকেই মিথ্যা খবর ছড়িয়ে অর্থ উপার্জনে বেশ সাফল্য পান। হর্নারের কোনো কোনো খবর গুগল নিউজ, সিএনএন ও ট্রাম্পের পুত্র এরিকের নজরে আসে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কাছে হর্নার স্বীকার করেছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে মিথ্যা খবর দিয়ে মাসে তিনি কম করে হলেও ১০ হাজার ডলার উপার্জন করে থাকেন।
ডিসইনফরমেডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাস্টিন কুলার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওকে বলেছেন, ফেসবুক ও অন্যান্য ইন্টারনেট মাধ্যমে মিথ্যা খবর বিলি করে তিনি কোনো কোনো মাসে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন।
ফেসবুক ও গুগল অবশ্য বলেছে মিথ্যা খবরের মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জনের দাবি করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। এই দুই সংস্থাই জানিয়েছে, মিথ্যা খবর নির্ণয়ের জন্য তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.