আগামী হজ মৌসুমে হজযাত্রী পরিবহনে একটি সুপরিসর (ওয়াইড বডি এয়ারক্রাফট) উড়োজাহাজ ইজারা নিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইন্স্যুরেন্সসহ অর্থাত্ এসিএমআই ভিত্তিতে উড়োজাহাজটি ইজারা নেয়া হবে। এর মাধ্যমে হজপূর্ব ও পরবর্তী মিলে কমপক্ষে ৭০টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান।
জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্তাব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেবিচকের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম ও বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায়ই হজের জন্য উড়োজাহাজ ইজারা নেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়। এতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মোসাদ্দিক আহমেদ এসিএমআই ভিত্তিতে একটি উড়োজাহাজ ইজারা নেয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মৌসুমে বহরের নিজস্ব উড়োজাহাজেই হজযাত্রী পরিবহন করে বিমান। সম্প্রতি বহরে কয়েকটি উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ায় নিয়মিত রুট চালু রেখেই নিজস্ব উড়োজাহাজে হজ ফ্লাইট চালাতে সমর্থ হয় বিমান। ফলে টানা কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে গত দুই বছর লাভের মুখ দেখে বিমান। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২১৪ কোটি ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান করেছিল বিমান। এর বিপরীতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩২৪ কোটি ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭৬ কোটি টাকা মুনাফা করে বিমান। এ অবস্থায় উড়োজাহাজ ইজারা নিলে এ ধারায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য একটি বড় উড়োজাহাজ ইজারা নেয়ার কথা জানিয়েছে বিমান। প্রয়োজন না থাকলেও একই ধরনের উদ্যোগ ২০১৫ সালেও নেয়া হয়েছিল। বিমানের অভ্যন্তরীণ একটি প্রভাবশালী মহল এর সঙ্গে জড়িত। এ মহলের ষড়যন্ত্রেই বিমান সে সময় একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করেছিল, যা পরবর্তীতে বাতিল করে মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, এসিএমআই ভিত্তিতে একটি বড় উড়োজাহাজ ইজারা নিতে গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) আহ্বান করে বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের করপোরেট প্ল্যানিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুর রহমান ফারুকী স্বাক্ষরিত ওই দরপত্রে বলা হয়েছে, আগ্রহী এয়ারলাইনস, অপারেটর, এয়ারক্রাফটের মালিক, এয়ারক্রাফট উত্পাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিই শুধু এ দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। এতে বেশকিছু শর্তেরও উল্লেখ করা হয়।
দরপত্রে বলা হয়, এ উড়োজাহাজের আসন সংখ্যা হতে হবে কমপক্ষে ৩০০। ৮ অক্টোবর ২০১৭-এর মধ্যে উড়োজাহাজের বয়স সর্বোচ্চ ২০ বছর হতে পারবে। উড়োজাহাজটি ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইন্স্যুরেন্স অংশীদারসহ ইজারা নেয়া হবে। একই সঙ্গে এর উড্ডয়ন সক্ষমতা হতে হবে কমপক্ষে ৭০০ ব্লক আওয়ার।
এ বিজ্ঞপ্তিতে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দরপত্র জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিমানের ই-মেইল ঠিকানা কিংবা প্রধান কার্যালয়ে রক্ষিত দরপত্র বাক্সে আরএফপি জমা দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (করপোরেট পরিকল্পনা), বিমান প্রধান কার্যালয় ও বলাকা ভবনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য উড়োজাহাজের ভাড়া দেড় হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। গত বছর সরকারিভাবে ১০ হাজার ও বেসরকারিভাবে ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজে গিয়েছিলেন।
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১-এর আওতায় (কোরবানি ছাড়া) হজে যেতে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ ও প্যাকেজ-২ (কোরবানিসহ)-এর আওতায় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা খরচ হবে। গত বছর এক্ষেত্রে ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৩ লাখ ৪ হাজার ৯০৩ ও ৩ লাখ ৬০ হাজার ২৮ টাকা। এছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার সর্বনিম্ন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বছর এ পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪১ টাকা। এ হিসাবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার হজে যাওয়ার মৌলিক ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৯৬ টাকা। এ ‘মৌলিক’ ব্যয়ের সঙ্গে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, কোরবানিসহ অন্যান্য ব্যয় যুক্ত করবে হজ এজেন্সিগুলো।