বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফার্স্ট অফিসার শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন। ২০১৪ সালে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বহির্গমনকালে তার লাগেজ থেকে ৪ হাজার কুয়েতি দিনার উদ্ধার করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এর জের ধরে শাস্তি, শাস্তি প্রত্যাহার এবং ট্রেনিংয়ে পাঠানোসহ নানা ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় এবং বিমানের মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি।
এ ঘটনায় এখন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বিমানকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, শাস্তি প্রদানের পর ৩ মাসের মধ্যে আপিলের নিয়ম রয়েছে যা ওই ফার্স্ট অফিসার যথাসময়ে করেছেন। কিন্তু আপিলের আলোকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। তাই আপিল পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
বিমান সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর বিমানের ফার্স্ট অফিসার শাখাওয়াত ‘অবৈধ সাজা’ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে প্রথম আবেদন করেন। বোয়িং ৭৩৭ এয়ারক্রাফটের পরিবর্তে বোয়িং ৭৭৭-এর ফ্লাইটে ডিউটি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে বহির্গমনকালে তার লাগেজ থেকে ৪ হাজার দিনার উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কাস্টমসকে জানান, আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কম থাকায় এবং শুল্ক আইন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান না থাকায় তিনি সরল বিশ্বাসে কুয়েতি বন্ধুর ঋণ পরিশোধের জন্য ওই অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। তার মতে, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য প্রমাণিত না হওয়ায় ‘দি কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯’ অনুযায়ী জরিমানা আরোপপূর্বক আটককৃত অর্থ নগদায়নের সুযোগ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় বিমানের সহকারী ব্যবস্থাপক, প্রশাসন (ফ্লাইট অপারেশন্স) স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০১৪ সালের ২৯ জুন তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বিমানের ব্যবস্থাপক, প্রশাসন (তদন্ত)। বিভাগীয় শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য ওই বছরের ৭ জুলাই পরিচালকের (প্রশাসন) কাছে এবং বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একই বছরের ৯ নভেম্বর, ২৯ নভেম্বর এবং পরে ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর ও ২০১৬ সালের ১ আগস্ট আবেদন করেন বৈমানিক শাখাওয়াত। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করে সাখাওয়াতের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এ সংক্রান্ত নথিতে দেখা গেছে, বিমানের ব্যবস্থাপক প্রশাসন (তদন্ত) ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করেন। বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারের পর আবার তার ইনক্রিমেন্ট বন্ধ এবং বোয়িং ৭৭৭ এয়ারক্রাফট থেকে বোয়িং ৭৩৭-এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। একে সাজা হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহার করে পুনরায় বোয়িং ৭৭৭-এ ফ্লাইটের ডিউটি দিতে আবেদন করেন তিনি। বিমানের এ পাইলটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত দিতে মন্ত্রণালয় থেকে বিমানকে চিঠি দেওয়া হয় গত ২ নভেম্বর। এ অবস্থায় গত ২০ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবার আবেদন করেন বৈমানিক শাখাওয়াত। তিনি তাতে উল্লেখ করেন, গত ১০ বছর ধরে প্রশস্ত উড়োজাহাজে বৈমানিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অহেতুক কারণে তাকে মাঝারি আকারের এয়ারক্রাফটে অর্থাৎ বোয়িং ৭৩৭-এ ট্রেনিংয়ের জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তাই বি ৭৩৭-এ ট্রেনিং কার্যক্রম স্থগিত করে বি ৭৭৭-এ ট্রেনিংয়ের জন্য পুনরায় আবেদন করেন তিনি।
এদিকে মন্ত্রণালয়কে বিমান জানিয়েছে শাখাওয়াত হোসেন বিমান কর্মচারী (চাকরি) প্রবিধিমালা ১৯৭৯-এর ৫৯ (৪) ধারা মোতাবেক তিন মাসের মধ্যে শাস্তি পুনর্বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদন (আপিল) করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে শাখাওয়াতের আবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাকে শর্তসাপেক্ষে শাস্তি দেওয়া হয়। আবার ১৩ আগস্ট এ সাময়িক বরখাস্ত আদেশ (১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে জারিকৃত) প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া বিভাগীয় শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য তিনি ওই বছরের ৭ জুলাই পরিচালক (প্রশাসন) বরাবরে আবেদন করেছেন। এরপর বিভিন্ন তারিখে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর কাছেও আবেদন করেন। তাই বিমানের কর্মচারী (চাকরি) প্রবিধানমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩ মাসের মধ্যে আপিলের বিধান রয়েছে যা যথাসময়ে করা হয়েছে। বরং আপিল অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার তথ্য জানা যায়নি বলে বিমানকে জানায় মন্ত্রণালয়।
সূত্র:আমাদের সময়