আমেরিকার চলাচলে অক্ষম প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য চালু থাকা একটি জনপ্রিয় খাদ্য কর্মসূচির ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খড়্গ নেমে এসেছে। ‘মিলস অন হুইলস’ নামে পরিচিত এ কর্মসূচিতে প্রবীণ লোকজনের ঘরে প্রতিদিন তৈরি খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিরোনামে তাঁর প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আরও বহু জনকল্যাণ খাতের সঙ্গে প্রস্তাবিত এ বাজেটে চলাচলে অক্ষম প্রবীণদের বিনা মূল্যে তৈরি খাবার প্রাপ্তির কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ‘মিলস অন হুইলস’ কর্মসূচিতে সরাসরি অনুদান কমানোর কথা বলা হয়নি। তবে হেলথ এবং হিউম্যান সার্ভিসের যে খাত থেকে কেন্দ্রীয় অনুদান আসে, তা সংকুচিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবীণদের জন্য জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান সেন্ডি মার্কউড বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে প্রবীণদের তৈরি খাবার দেওয়ার কর্মসূচি মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হবে। ঠিক কতটা বাধাগ্রস্ত হবে, তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যেভাবেই হোক এই কর্মসূচি টিকিয়ে রাখার জন্য মাঠে নেমেছে।
পরিবারবিচ্ছিন্ন আমেরিকার লাখ লাখ প্রবীণের শেষ আশ্রয় হয় সেবাকেন্দ্র বা বৃদ্ধাশ্রমে। এর বাইরে অনেক প্রবীণ, যাঁরা নিজের বাড়িতে একাকী থাকেন, তাঁদের জন্য ‘মিলস অন হুইলস’ নামের একটি কর্মসূচি বেশ জনপ্রিয়। ১৯৭৪ সাল থেকে চালু থাকা এ কর্মসূচিতে কর্মক্ষম নন, পরিবারবিচ্ছিন্ন প্রবীণদের তৈরি খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও স্বেচ্ছাসেবীদের অনুদানে এ কর্মসূচি আমেরিকার প্রায় পাঁচ হাজার সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেন। এর ফাঁকে একাকী থাকা প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলেন, খোঁজ খবর নেন। জরিপে দেখা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বৃদ্ধাশ্রমে বা সেবাকেন্দ্রে প্রতিজনের পেছনে ব্যয় হয় বছরে প্রায় ষাট হাজার ডলার। অথচ ‘মিলস অন হুইলস’ কর্মসূচিতে প্রতিজনের জন্য বছরে ব্যয় হয় তিন হাজার ডলারের কম।
এমন জনপ্রিয় কর্মসূচি শুনতে ভালো মনে হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাজেটে গুরুত্ব পায়নি।
স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, গত বছর আমেরিকার ২৫ লাখ প্রবীণকে তৈরি খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ‘মিলস অন হুইলস’ কর্মসূচির মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এ বাজেটে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো তাদের ওয়েবসাইটে লিখে দিয়েছে, ‘মিলস অন হুইলস’ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় অনুদানপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাহায্য করে কর্মসূচি টিকিয়ে রাখার জন্য আবেদন জানানোর পর ব্যক্তিগত অনুদান তিন গুণ বেশি আসতে শুরু করেছে।
আইনপ্রণেতারাও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস উইম্যান লিন্ডা সেঞ্চেজ বলেছেন, হোয়াইট হাউস আক্ষরিক অর্থে প্রবীণদের খাবার কেড়ে নিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ম্যানেজমেন্ট এবং বাজেট ডিরেক্টর মিক মাল্ভেনি বলেছেন, কেবল শুনতে ভালো শোনালেও সরকার এ ধরনের কর্মসূচিতে অর্থ ব্যয় করতে পারে না।