বিশ্বপুলিশ হবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বপুলিশ হবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র আর পুলিশিগিরি করবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই আমাদের সেনারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আমরা এতগুলো দেশে সেনা পাঠিয়েছি যে, অনেকেই সেগুলোর নামও শোনেনি। এটা খুবই হাস্যকর। বুধবার হঠাৎই ইরাক সফরে গিয়ে এসব বলেন তিনি।
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে সেনা তুলে নেয়ার ঘোষণার সপ্তাহখানেক পরই বিশ্বে মার্কিন সেনাদের পুলিশি ভূমিকা ইতি টানার ঘোষণা দিলেন তিনি। এদিকে ট্রাম্পের অঘোষিত ইরাক সফরকে দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির রাজনীতিক ও মিলিশিয়া নেতারা।
এ ঘটনায় পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন দাবি করেছেন শিয়াপন্থী ইসলাহ পার্লামেন্টারি ব্লকের নেতা সাবাহ আল সাদি। এ ঘটনাকে দেশের সার্বভৌমত্বের ভয়ানক লঙ্ঘন এবং আগ্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। ভবিষ্যতে এ ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে পার্লামেন্টকে আলোচনার আহ্বান জানান এ রাজনীতিক। খবর এএফপি ও আলজাজিরার।
অঘোষিত এ সফরে এসে ইরাকের মার্কিন সেনাঘাঁটিতে সেনা সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। ফার্স্টলেডি ট্রাম্পকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকাল ৭টার দিকে ইরাকের আল আসাদ বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ট্রাম্প। বাগদাদের বিমানঘাঁটিতে নেমেই সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংঘাতকবলিত কোনো এলাকায় এটাই ট্রাম্পের প্রথম সফর। সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় ইরাক থেকে সেনা সরানোর এখনই কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলেও জানান ট্রাম্প। দরকার হলে ইরাকে থেকেই সিরিয়ায় অভিযান চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, আইএস এখন পরাস্থ হওয়ার পথে। তাদের কথিত খিলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। তাই এখন সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেয়া হবে একটি সঠিক পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, অন্য দেশ আমাদের থেকে সুবিধা নিক, আমরা তা আর চাই না।
সুরক্ষার বিনিময়ে কেউ আমাদেরকে অর্থ দিচ্ছে না। এবার তাদেরকে সেই অর্থ দিতে বাধ্য হবে। মার্কিন সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত তার ‘আমেরিকা প্রথম’ স্লোগানেরই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনবিরোধী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদরের নেতৃত্বাধীন ইসলাহ পার্টির হয়ে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাবাহ আল সাদি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অঘোষিত সফরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ট্রাম্পকে তার নিজের সীমারেখা সম্পর্কে জানা উচিত। ইরাকে মার্কিন দখলদারিত্বের অবসান হয়েছে।
মুক্তাদা আল সদর ২০১১ সাল পর্যন্ত মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে তিনি ইরাকি জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে ফেরেন। তার জোটে কমিউনিস্ট ও অসাম্প্রদায়িক ইরাকিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা ইরাকে যে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তা যুক্তরাষ্ট্র বা ইরান যেই হোক। পার্লামেন্টে ইসলাহ পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া নেতা হাদি আল-আমিরির নেতৃত্বাধীন বিনা ব্লকের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের এ সফর নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানানো হয়েছে। বিনা ব্লকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এ সফর কূটনৈতিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট ও ভয়াবহ লঙ্ঘন।
এর মধ্য দিয়ে তিনি ইরাক সরকারের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখিয়েছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.