জোবায়ের আহম্মেদ অভি: সারা বিশ্বের তরুণদের কাছে গুগল একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। গুগলে একটি চাকরিই যেন পারে তাদের সেই স্বপ্ন সত্যি করতে। কিন্তু আদতে সবার সেই স্বপ্ন সত্যি হয় না।
সার্চ জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি সিভি জমা পড়ে চাকুরীর জন্য। তবে এর মধ্যে মাত্র ৪ হাজারের কাছাকাছি প্রার্থীর কপালেই জুটে গুগলে চাকরির মত একটি সোনার হরিণ।
অনেকের মনেই এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ভাগ্যবান এই তরুণদের মধ্যে কী আছে যা গলিয়ে দেয় গুগলের মানব সম্পদ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের মন?
এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে গুগলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ল্যাসজলো বকের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। ল্যাসজলো গুগলের পিপল অপারেশন ডিভিশনে কর্মরত। মূলত গুগলের নিয়োগের বিষয়টি এখান থেকেই দেখা হয়। বিভিন্ন সময়ে নিয় ইয়র্ক টাইমস, দ্য ইকোনমিস্ট, কোয়ার্টজ এবং স্টুডেন্টস অন গুগল প্লাসকে এসব সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তিনি। আর এসকল সাক্ষাৎকার ঘেঁটে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিজনেস ইনসাইডার।
চলুন তাহলে, জেনে নেওয়া যাক কিছু যোগ্যতার ব্যাপারে যা গুগলে চাকরির পথ খুলে দিতে পারে:
১. ‘গুগলিনেস’: শব্দটি দেখেই অনেকে বিস্মিত হতে পারেন। ‘গুগলিনেস’ আবার কী? এই ব্যাপারে ল্যাসজলো বলেন, “মজা করতে পারা, নিষ্ঠাবান থাকা, নম্রতা, সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারা, সংক্ষেপে এটাই হল ‘গুগলিনেস’।”
২. নেতৃত্ব দেওয়ার সুপ্ত প্রতিভা: “আমরা এমন কাউকে চাই না যে সব সময় ক্যাপ্টেনের চেয়ারে বসে থাকবে।”, বলেন ল্যাসজলো। “আমরা এমন একজনকেই চাই যে দরকারের সময় এসে হাল ধরবে। আর এর থেকেও বড় বিষয় হল প্রয়োজন শেষে আবার সে নেতৃত্ব থেকে সরেও আসবে”
৩. হতে হবে জ্ঞানী: “আপনি যদি এমন কাউকে নিয়োগ দেন যে মেধাবী, জানতে উৎসুক এবং শিখতে পারে, তাহলে তারা কিছু কিছু সমস্যা সমাধানে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা আগে কেউ পারেনি।”, গুগল প্লাসের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে জানান ল্যাসজলো। “সবাই একটি কাজ যেভাবে করে, সেভাবে না করে একটু ভিন্নভাবে করাটাই কৃতিত্ব। নতুন কিছু শেখা এবং দরকারের সময় সেটিকে কাজে লাগাতে পারার মত দক্ষতা থাকলেই আমরা তাকে নির্বাচিত করি।”, বলেন তিনি।
৪.থাকতে হবে মনের জোর: একবার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক ছাত্রের সাথে আলাপ করছিলেন ল্যাসজলো যে কিনা কম্পিউটার সায়েন্স এবং গণিতের উপর মেজর করছিল। তো সেই ছাত্র কম্পিউটার সায়েন্স বদলে অন্য কোন বিষয়ে মেজর করার কথা ভাবছিল তখন। “আমি তাকে বললাম যে ইংরেজি বিষয়ের এ+ গ্রেডের ছাত্র হওয়ার থেকে কম্পিউটার সায়েন্সের বি গ্রেড ছাত্র হওয়া ভাল। কারণ কম্পিউটার সায়েন্স চিন্তা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে এটা বেশ চ্যালেঞ্জিংও বটে।”, বলেন তিনি। সেই ছাত্র পরবর্তীতে গুগলে ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিয়েছিল বলেও জানান তিনি।
৫. বৈচিত্র্য: দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনযাপনে বৈচিত্র্যময়তা থাকাটা গুগলে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত।
৬. কঠিন কাজ করতে কতটা পারদর্শী: গুগল বর্তমানে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার আগে বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতাও জেনে নিতে চায়। আর তাই প্রার্থীকে এই জাতীয় প্রশ্নও করা হয় যার মাধ্যমে গুগল জানতে পারে যে বাস্তব জীবনে একজন চাকুরীপ্রার্থী কিভাবে একটি সমস্যা সমাধান করে এবং তারা ‘কঠিন’ বলতে আসলে কী বোঝে।
৭. বিশ্লেষণী ক্ষমতা: যারা কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের, তারা যেকোনো সমস্যাকেই যৌক্তিক এবং কাঠামোগতভাবে চিন্তা করে। “শ্রম বাজারে আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে এই বিশ্লেষণী ক্ষমতা”, জানান ল্যাসজলো।
৮. কিন্তু জিপিএ নিয়ে চিন্তা করে না গুগল: জিপিএ এবং পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চিন্তিত নয় গুগল। কারণ গুগলে সফলতার পথে এই দুটি জিনিস কখনোই বাধা হতে পারে না। “প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ আসলে একটি মেকি ব্যাপার।”, মনে করেন ল্যাজসলো।