খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন সংশোধন হবেঃ অর্থমন্ত্রী।
ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। ১৯৭২ সাল থেকে এ আইনের সব ধারা ও উপধারার দুর্বলতা শনাক্ত করে এর সংশোধনী আনা হবে। এছাড়া ইতিপূর্বে রাইটঅফ (অবলোপন) করা ঋণ পর্যালোচনা করতে গঠন করা হবে শক্তিশালী একটি কমিটি। ওই কমিটি প্রতিটি কেইস পৃথকভাবে পর্যালোচনা করবে। কেন, কী কারণে খেলাপি ও রাইটঅফ করা হয়েছে এবং এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে কমিটি।
বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আরও বলেন, সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হোক না কেন, এ ঋণের অর্থ ফেরত দিতেই হবে।
ব্যাংকিং খাতে কমিশন গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকিং খাতে কী সমস্যা হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, কেন হচ্ছে? এসব সমস্যা আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি। এখন আইন সংশোধন করা হবে। সেখান থেকে সফল হলে কমিশন গঠনের প্রয়োজন হবে না। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কমে আসত, যদি বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বলবৎ ও বাস্তবায়ন করা যেত। এসব আইনে কিছু দুর্বলতা থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। সেজন্য এ আইন সংশোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন নিয়ে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে এ আইনের সংশোধন করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায়ে আইন সংশোধন, রাইটঅফ ঋণগুলো পর্যালোচনায় কমিটি গঠন ও জনবল নিয়োগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধন করা হলে খেলাপিদের দ্রুত উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। যদিও সব নাগরিকের উচ্চ আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে। তবে খেলাপি ঋণ নিয়ে উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আমার কথা হচ্ছে- ব্যাংকের টাকা সাধারণ জনগণের টাকা। এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। দেশের জনগণের টাকা বেহাত হোক বা ফেরত না আসুক- এটি চাইতে পারি না। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য- সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে। এজন্য আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করবেন।
রাইটঅফ ঋণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব ঋণ খেলাপি হয়েছে, রাইটঅফ করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করতে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি প্রতিটি কেইস পৃথকভাবে পর্যালোচনা করবে। সেখানে দেখা হবে- কিভাবে ও কার কারণে যে ঋণ দেয়া হয়েছে, যা ফেরত পাচ্ছি না। সে ঋণ পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। সেখানেও আইনি জটিলতা কাটানো হবে। কিছু ক্ষেত্রে বিধিও সংশোধন করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্তকবার্তা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কাদের কারণে ঋণগুলো খেলাপি হয়েছে, এর সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পৃক্ত আছে কিনা, সেটাও খুঁজে বের করা হবে। কারণ ঋণ গ্রহীতা চেষ্টা করবে টাকা ফেরত না দিয়ে থাকার জন্য। তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে কিনা, সরকারিভাবে কোনো ত্র“টি-বিচ্যুতি হয়েছে কিনা, সেটিও আমরা দেখব। তবে আমরা বলছি কারও বিরুদ্ধে শক্ত হব না, যদি আমরা টাকা ফেরত পাই।
জনবল সংকট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়ে পরিচালনা করছে। জনবল সংকট রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করা হলে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। এজন্য জনবল সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ সেন্টার আরও শক্তিশালী করা হবে।
বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ভালো, সুনাম ভালো তাদের উৎসাহিত করতে তা বলা হয়েছে। কারণ বিদেশি ঋণে সুদের হার কম। বাংলাদেশে সুদের হার বেশি থাকায় অনেকে ব্যবসা করতে পারছেন না। তবে বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে।