যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে ক্ষতি ৬০০ কোটি ডলার

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে ক্ষতি ৬০০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রে এক মাসের বেশী সময় ধরে চলতে থাকা ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ-প্রলম্বিত ৩৫ দিনের কেন্দ্রীয় সরকারের আংশিক অচলাবস্থা বা শাটডাউন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক রিপোর্ট মোতাবেক প্রায় ১৬০ কোটি ডলার মাত্রায় রাজধানী শহরের সুনাম খ্যাতির লোকসান খাতে-হানি বাবদে, গচ্চা দেবার পর এই দিন তিন আগে শেষ হয়েছে শুক্রবার পড়ন্ত বেলায় এবং আজ সোমবার প্রথম আবার সেই আগের মতোই শুরু হয়েছে সপ্তাহ শুরুর নিয়মিত কর্মব্যস্ততা। এতো সব কিছু সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করছেন– এখন, শাটডাউন উত্তর যাই কিছু কংগ্রেসীয় নিস্পত্তি আলোচনা হবে- তাতে, তাঁর আন্দাজ মোতাবেক, দক্ষিনী সীমান্তের দেয়াল গড়ায় তাঁর প্রার্থিত তহবিলের অর্থ মেলার সম্ভাবনা অর্ধেক মাত্রায়– অর্থাত পঞ্চাশ শতাংশের কম বলে, তাঁর কাছে প্রতিভাত হচ্ছে।

ট্রাম্প গতকাল রবিবার ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল পত্রিকার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানান, দ্বিদলীয় যে আলোচক দল এ নিস্পত্তি আলোচনায় সংশ্লিষ্ট তার ভেতর খুব ভালো সজ্জন ব্যক্তি রয়েছেন কয়েকজনই। তবে তিনি ৫৭০ কোটি ডলার অর্থায়েনের যে দাবি জানিয়েছেন, তার চেয়ে কিছু কমও তিনি নিতে রাজি হবেন বলে, নিজেরই তাঁর মনে হয় না। বলেন, সঠিক যাই, তাই আমাকে করতে হবে অবশ্যই।

এদেশে নিজেদের ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখে যারা, তথাকথিত সেই ড্রিমার বা স্বপ্নাবিস্টদের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির বিষয়টি রফার অংশ হিসেবে তিনি মানবেন- এটাও তাঁর মনে হয় না বলে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট। বলেন, শৈশবে অবৈধভাবে এদেশে আনা হয়েছে যাদের সেই অভিবাসিদের ভবিষ্যত নির্ধারণ ভিন্ন একটি বিষয়-পৃথক সময়ে তার উপস্থাপন হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আবার একটা আংশিক অচলাবস্থা- শাট ডাউনের বিকল্প সম্ভাবনা থাকতে পারে অবশ্যই, দেয়াল গড়তে যা তিনি চান, সেটা তিনি না পেলে- সেক্ষেত্রে। তিনি এও বলেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিরেকেই দেয়াল নির্মানের অর্থ পেতে দরকার পড়লে জরূরী অবস্থার ঘোষনাও দিতে পারেন তিনি– যে কর্মপন্থার বিষয়টি ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ হতে আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে পারে।

শুক্রবার ট্রাম্প আংশিক অচল সরকারী কাজকর্ম আবার তিন সপ্তাহের জন্যে সচল করার বিষয়টিতে সম্মতি দেন- দেয়াল গড়ার অর্থায়ন ব্যতিরেকেই। ইতিমধ্যে ডেমোক্র্যাট দলের নয় সদস্য এবং রেপাবলিকানদের তরফের আটজনকে নিয়ে গঠিত একটি প্যানেল সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক একটি রফা প্রনয়ণের চেষ্টা চালাবেন– যেটা কিনা কংগ্রেস এবং ট্রাম্প, উভয়ের কাছেই গ্রহনযোগ্য হতে হবে এবং যার প্রেক্ষিতে চলতি অর্থ বছরের বাদবাকি মেয়াদটুকু সরকারী কাজকর্মের গোটাটাকেই চালু রাখা যাবে।

এই যে সরকারী কাজকর্মের আংশিক অচলাবস্থা খতম হলো সে অচলাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় আট লক্ষ কর্মী, কর্ম বিরতিতে থেকেছেন বা বেতন-পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করেছেন যাঁরা, তাঁদের সবারই ভোগান্তি হয়েছে বিস্তর। এঁদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র দফতর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির লোকজন ছিলেন, নিরাপত্তা কর্মী, আইন বলবত সদস্য, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক কন্ট্রোলারেরাও ছিলেন।

হোয়াইট হাউসের ভারপ্রাপ্ত চীফ অফ স্ট্যাফ মিক মালভেনী রবিবার ফক্স নিউজ টেলিভিশনকে বলেন, পরের তিনটে সপ্তাহে, ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসন প্রতিহতকরণ এবং বেআইনী মাদকের চোরাচালান রুদ্ধ করতে, তাঁরা চান কিনা, সেটাই প্রমান করবার একটা সুযোগ পাবেন।

মালভেনী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের তিন হাজার দুইশো কিলোমিটার সীমান্তের প্রায় চারশো কিলোমিটার অংশে দেয়াল নির্মানের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ডেমোক্র্যাটরা এখন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত প্রকাশে সম্মত হচ্ছেন বলেই হোয়াইট হাউসের কাছে প্রতিয়মান হচ্ছে।

কংগ্রেসে ট্রাম্পের মূখ্য দুই প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সী পেলৌসী এবং সেনেট সভার ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার দেয়াল নির্মানকল্পে প্রেসিডেন্টের দাবির অর্থায়নের সম্মতি প্রদানে কঠোরভাবে অসম্মতি জানিয়েছেন। তবে মালভেনী বলছেন, নিস্পত্তি আলোচনাকালে ডেমোক্র্যাট দলীয়রা ঐ জিজ্ঞাসার একটা জবাব দেবার সুযোগ পাবেন, যে জিজ্ঞাসায় প্রশ্ন করা হচ্ছে, সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে আপনারা কি লোকজনকে সত্য কথাই বলছেন, না এমোন কিছু করছেন রাজনৈতিক দিক দিয়ে যেটা কিনা অপকৌশল বলে প্রতিপন্ন হতে পারে।

ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা তাঁদেরও কাম্য। তবে কিনা দেয়াল নির্মান বাস্তব সম্মত নয়, এ ঐ অর্থের অপচয় মাত্র। তাঁরা বলছেন, এর চেয়ে বরং সীমান্ত পারাপার পথের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, আরো বেশি সংখ্যায় সীমান্ত প্রহরী মোতায়েন এবং বেশি হারে প্রযুক্তি পন্থার প্রয়োগ অধিকতর কার্যকর প্রমানিত হতে পারে।

এই গেলো সপ্তাহে, রেপাবলিকানদের পক্ষ থেকে সেনেট সভায় উত্থাপিত রেপাবলিকান দলের পক্ষের উত্থাপিত যে প্রস্তাবটির পক্ষে ডেমোক্র্যাট দলের একমাত্র সাংসদ সেনেটর জৌ মানচিন সমর্থনসূচক ভোট দিয়েছিলেন যিনি, সেই তিনি বলেন- ডেমোক্র্যাটরা সীমান্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন বিষয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি বিবেচনা করে থাকেন এবং আমরা এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পানে চেয়ে বলতে চাই- আপনারাই বলুন, সঠিক কোন পথটি আমাদের অনুসরণ করা উচিত।

শাটডাউন খতম করতে ট্রাম্প এবং কংগ্রেস তিন সপ্তাহের ক্রমভঙ্গ বা ছেদ টানায় যে সম্মতি দিলেন তারপর সরকারী কাজকর্ম আবার শুরু হয়েছে যথারীতি- তবে কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব কাজকর্মে খন্ডকালীন ভিত্তিতে অনিয়মিত চুক্তির কন্ট্র্যাক্টে কাজ করছেন যাঁরা সেই তাঁদের কর্মহীন সময়টুকুর মজুরী কিভাবে দেওয়া যায়– দেওয়া যেতে পারে, সেসব নির্ধারিত না হওয়া অবধি– স্থিরিকৃত না হওয়া পর্যন্ত, তাঁদের অসুবিধে হবে যে, সেটা তো বলাই বাহুল্য।

তবে এটা ঠিক যে, এ শাটডাউনে লোকসানের পরিমান যে অনেক বেশী- সেটা বলাই বাহুল্য। যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতিতে, স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড পুওর’স বৈশ্বিক মানের হারে অর্থনীতির ক্ষতির পরিমান প্রায় ৬০০ কোটি ডলার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.