ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পরমাণু ইস্যুতে ইরানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি।
ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইরানের ক্ষেত্রে আমি যেটা চাই সেটা হচ্ছে, তারা আমাকে আলোচনার জন্য ডাকুক।’
তিনি আরও বলেন, তারা পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হোক আমরা সেটা চাই না। এ সময় ট্রাম্প দাবি করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইরানের নেতাদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রাখছেন। ট্রাম্পকে আলোচনায় ডাকতে কেরিই নিষেধ করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের ৬০ দিনের আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করেছে ইউরোপ। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, ইরান পরমাণু চুক্তি রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে এ ব্যাপারে তেহরানের যে কোনো আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করছে। বুধবার এক বিবৃতিতে ২০১৫ সালে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে আংশিক সরে আসার ঘোষণা দেয় ইরান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঐতিহাসিক এ সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের এক বছরের মাথায় তেহরানে নিযুক্ত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রদূতদের ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করা হয়।
বিবিসি জানায়, চিঠিতে ইরানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে তেল এবং ব্যাংকিং খাতের জন্য দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য পরমাণু সমঝোতায় স্বাক্ষর করা দেশগুলোকে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। আরও বলা হয়, ইরানের দাবি যতটা মেনে নেয়া তেহরানও সে অনুযায়ী তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে।
পরদিনই তেহরানের এ হুশিয়ারির জবাব দেয় ইইউভুক্ত কয়েকটি দেশ। যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য জানায়, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ইরান পরমাণু চুক্তি। সবার নিরাপত্তার স্বার্থে এর সুরক্ষা প্রয়োজন। এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা যে কোনো ধরনের আলটিমেটাম প্রত্যাখ্যান করছি।
জেসিপিওএ এবং এনপিটি অধীনে ইরানের সঙ্গে চুক্তির প্রতিশ্রুতি রাখা হবে।’ পরমাণু কর্মসূচি হ্রাস করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে- এই শর্তে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে ইরান ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিতে সই করে ইরান।
শুরু থেকেই চুক্তির প্রতিটি শর্তই মেনে আসছে তেহরান। এরপরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর অভিযোগ এনে গত বছর চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালে তুলে নেয়া সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ওয়াশিংটনের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞায় ইরানি মুদ্রার মূল্যমান কমতে কমতে রেকর্ড সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতি হয়েছে চার গুণ, হাতছাড়া হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। এরপরও ইরান এতদিন ধরে চুক্তিতে দেয়া সব প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করে আসছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পর্যবেক্ষকরা। ২০১৫ সালে চুক্তির পর থেকে এ সংস্থাই তেহরানের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছে।