প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আগামীতে যুদ্ধবিমান তৈরি করবে। গতকাল বুধবার তেজগাঁওয়ে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশার-এ এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানের অন্তর্ভুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আগামীতে নিজেদের উদ্যোগে যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ। শিগগিরই রাশিয়া থেকে লোন প্রটোকলের আওতায় ওয়াই এ কে-১৩০ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেইনার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইতোপূর্বে রাশিয়া থেকে তিনটি এমআই-১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে। একই প্রটোকলের আওতায় সমপ্রতি আরো ৫টি এমআই-১৭১ এস এইচ হেলিকপ্টারের মধ্যে ৪টি অন্তর্ভুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং শিগগিরই আরেকটি অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া ১টি এমআই-১৭১-ই হেলিকপ্টার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন হয়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে বিমান বাহিনীতে দু’টি আগাস্তা ওয়েস্ট ল্যান্ড হেলিকপ্টার সংযোজিত হতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণ ও এই বাহিনীর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৌশলগত দিক থেকে একটি সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশের আকাশসীমার অতন্দ্র প্রহরী হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের বন্ধু হতে হবে। পরিশ্রম, পেশাগত দক্ষতা ও সততার বিকল্প নেই। তাই সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আপনাদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনে মনোনিবেশ করতে হবে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় সংগ্রহ করা এই বিমানের উড্ডয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিমান বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ যত্ন নেবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন বিমান বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এর আগে পরিবহন বিমানের বৈমানিকরা প্রথমে পিটি-৬ ও টি-৩৭ বিমানে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ নিতেন, পরে নিতেন পরিবহন বিমান চালনার প্রশিক্ষণ। এতে প্রশিক্ষণ ব্যয় বেড়ে যেত। এল-৪১০ বিমানের অন্তর্ভুক্তির ফলে এ ব্যয় কমে আসবে। অবতরণের ক্ষেত্রে এ বিমানে বেশি সুবিধা থাকায় দুর্গম অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে।
বিমান অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, টহল, আকাশপথে জরিপ ও প্যারা ট্রুপিং পরিচালনার পাশাপাশি বিমান বাহিনীর সার্বিক পরিবহন সামর্থ্যকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে প্রশিক্ষণের অবকাঠামোগত সুদৃঢ় ভিত্তি। মান ও দক্ষতায়ও আমরা কোনভাবে পিছিয়ে নেই। তাই আমি আপনাদের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। কোনো রকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়া গত ২০ বছরে জাতিসংঘ মিশনে আমাদের বৈমানিকগণ প্রায় পঞ্চাশ হাজার উড্ডয়ন ঘণ্টা সম্পন্ন করেছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয় পেশাগত অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মাদ ইনামুল বারী ও বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার-এর এয়ার অফিসার্স কমান্ডিং এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করে। তিনি অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং উইং কমান্ডার রাশেদ আহমেদ সিদ্দিকের হাতে অন্তর্ভুক্তির আদেশ তুলে দেন।
পরে তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের তৈরি ৩টি নতুন এল-৪১০ পরিবহন প্রশিক্ষণ বিমানের অন্তর্ভুক্তি উপলক্ষে কেক কাটেন এবং একটিতে আরোহণ করে এর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মাদ ইনামুল বারী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুঁইয়া, ফারুক খান এমপি ও মাহবুবুর রহমান এমপি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।